খেয়াল খুশিমতো স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন। অন্য শিক্ষকেরাও ক্লাস নেন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো। শিক্ষার্থীরা যখন খুশি আসে, আবার চলেও যায়। স্যাঁতস্যাঁতে জরাজীর্ণ খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথটি নাই বললেই। স্কুলের সামনেই শহীদ মিনার সেখানে স্তুপ করে খড়ি রাখা হয়েছে। পাঠকক্ষের দেয়াল ঘেঁষা পশ্চিম পাশে কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। সেখান থেকে বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে যে কোন মায়ের বুক খালি হতে পারে! পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই গোটা প্রতিষ্ঠানে। মাকড়সার জালে পরিপূর্ণ গোটা শ্রেণিকক্ষ। বছরের ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো করা হয়নি ক্লাস রুটিন। নতুন শিক্ষক যোগদান করলেও শিক্ষকদের মাঝে বন্টন করা হয়নি শ্রেণিকক্ষের পাঠদান। যার কারণে শিক্ষকরা স্কুলে এসে বসে থেকে আবার চলে যান।ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন, অগ্নিনির্বাপক স্প্রে মেশিন, জ্বর মাপার থার্মোমিটার এসবের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন সব নষ্ট হয়ে গেছে আমি এসব বাসায় রেখেছি।
”এই অবস্থা নীলফামারী ডিমলা উপজেলায় ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চাকলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের”।
জানা গেছে, কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ে শিক্ষককের সংখ্যা তিন জন। তবে প্রধান শিক্ষকের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে অন্য শিক্ষকেরা পাঠদান করেন খেয়ালখুশিমতো। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা আর আড্ডা মেরে বাড়ি যায়। আর স্কুল ছুটি হয় শিক্ষকদের ইচ্ছে মত। ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। তাই অত্র এলাকার অনেকেই পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে।
বুধবার (২২শে জুন) দুপুর ২.২০ মিনিটে সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো স্কুল শুনশান। মাত্র দুইজন শিক্ষিকা দাঁড়িয়ে আছেন অফিস কক্ষের সামনে। মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেনের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন নামাজ পড়তে এসেছি। ২.২৬ মিনিটে কোন নামাজ জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। তিন মিনিটের
মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠানে চলে আসেন। আমরা একাধিকবার আপনার প্রতিষ্ঠানে এসে আপনাকে না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে চাইলে তিনি আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম ভাঙ্গাতে থাকেন। তিনি বলেন নিউজ করে লাভ নাই পারলে নিউজ করেন।
স্থানীয় যুবক মহসিন, মাসুদ রানা ও সুজনের কাছে স্কুলের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, স্কুল চলছে, শিক্ষকও আছে। কিন্তু নিয়মিত পাঠদান করা হয় না। নতুন দুই ম্যাডাম আসার পর এখন একটু ক্লাস হয়। তবে প্রধান শিক্ষকের সকালে হাজিরার সময় দেখা পাওয়া যায় না। ছাড়া দুপুর ২টার পর স্কুল ছুটি দেয়া হয়। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশের অসংখ্য মানুষ প্রধান শিক্ষক উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের বলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উনিতো আগে তেমন স্কুলে আসতেন না, এখন আসেন, আমি বলার পর এখন কিছুটা হলেও আসেন। আমি উনাকে নানা ভাবে বলার পর এখন কিছুটা সময় ক্লাস নেন।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সাজ্জাদুজ্জামান কে গত দুই দিনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা তাকে ডাকবো তিনি কেন নিয়মিত পাঠদানে অংশগ্রহণ করেন না? প্রয়োজনে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।