স্বভাবতই শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। মহান আল্লাহতায়ালাও শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন। ফলে মুসলিম সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। যেখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন – ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি (ইবনু মাজাহ :২২৫)।’ -সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে অন্য কিছুর সাথে তুলনার কোন অবকাশ নেই।
ইলমে নববীর মধু ভরা পুষ্প কাননে বিচরণ করতে গিয়ে আমরা সন্ধান পেয়েছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক জনাব
আ, ন, ম তাজুল ইসলাম সাহেবের। যিনি দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসা নামক ইলমে নববীর এই পুষ্প কাননে প্রায় সুধীর্গ ৪০ বছর যাবত নির্বিঘ্নে মধু বিতরণ করে গিয়েছেন।
জনাব আ, ন, ম তাজুল ইসলাম সাহেব ১৯৮৪ সালে দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসায় প্রভাষক পোস্টে জয়েন করেন। পরে ২০০২ সালে পদোন্নতি পেয়ে তিনি প্রিন্সিপাল হিসেবে নিযুক্ত হন। পরিশেষে ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট সরকারি হিসেবে উনার কর্ম জীবন শেষ হয়।
ওনার সুধীর্গ এই কর্মজীবনে সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার এক উজ্জ্বল নজির তিনি স্থাপন করে গিয়েছেন। ওনার এমন শত শত ছাত্র রয়েছে যারা ওনার থেকে দ্বীনি ইলম শিখে দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় দিনের খেদমত করে যাচ্ছেন। তিনি ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। ছাত্রদের হক্বের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সর্বদা সচেষ্ট।
গত ১৭ই আগস্ট মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ওনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেন। সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে। মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন প্রিয় উস্তাজ হযরত মাওলানা আ ন ম তাজুল ইসলাম সাহেব। প্রায় প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই উনাকে সম্মাননা ক্রেস্ট সহ হাদিয়া বা উপহার প্রদান করেন।
আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছে গাজীমুড়া মাদ্রাসার দাখিল ১৭ ও আলিম ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্যরকম আয়োজনটি। মাদ্রাসা কর্তৃক গত 17 আগস্ট বিদায় অনুষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থী আলাদাভাবে হুজুরের সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি, তাই এই ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা গত পহেলা অক্টোবর হুজুরের দো’য়া নিতে সরাসরি হুজুরের বাসায় উপস্থিত হয়। এ সময় ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে হুজুরকে সম্মাননা ক্রেস্ট সহ উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
নিঃসন্দেহে উনার বিদায়ে মাদ্রাসা হারিয়েছে একজন উত্তম অভিভাবক। যিনি সর্বদা মাদ্রাসার কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতেন। নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসা থেকে বিদায় নিলেও তিনি থেকে যাবেন হাজারো ছাত্রছাত্রীর হৃদয়ের মনিকোঠায়। নিঃসন্দেহে মাদ্রাসার প্রতিটি বালুকণা তাকে মনে রাখবে সযত্নে, স্বমহিমায় তিনি থেকে যাবেন দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসার গৌরভ উজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায়।
লেখক:- কে, বি, এম আবদুল্লাহ।
শিক্ষার্থী : দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসা।