শরীয়তপুরের জাজিরায় ভোট না দেয়ায় বৃদ্ধ মহিলার বয়স্ক ভাতা স্থগিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বড় কৃষ্ণনগর (বিকে নগর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসকান্দার ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী মহিলার নাম ছাহেরা বেগম (৭৭) সে ওই ইউনিয়নের কদমআলী মাদবর কান্দি এলাকার মৃত মদন মাদবরের স্ত্রী।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে বিকে নগরে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। এলাকাভিত্তিক ও আত্মীয়তার কথা চিন্তা করে ছাহেরা বেগম সহ তার পরিবারের বাকী সদস্যরা সবাই সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর মাদবরকে ভোট দেন। বিষয়টি নিয়ে নিয়ে ছাহেরা বেগমের উপর ক্ষুব্ধ হন বর্তমান চেয়ারম্যান এসকান্দার ভুঁইয়া।
চেয়ারম্যান হওয়ার পর গত বছরের ১৭-আগস্ট উপজেলা উপজেলা সমাজসেবা অফিস বরাবর ছাহেরা বেগমের বয়স্ক ভাতা স্থগিতের জন্য লিখিত চিঠি পাঠান চেয়ারম্যান। লিখিত ওই চিঠিতে বলা হয়, উল্লেখিত ছাহেরা বেগমকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় এবং লোক মারফতে ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলা হলেও তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি। শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে তিনি (চেয়ারম্যান) জানতে পারেন, ছাহেরা বেগম দীর্ঘদিন এলাকায় থাকেন না। তাই তার বয়স্ক ভাতা স্থগিত করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে অনুরোধ করেন তিনি।
তবে ছাহেরা বেগমের পাড়া-প্রতিবেশীরা জানায়, সে সবসময় গ্রামেই বসবাস করে। সে বাড়ি ছেড়ে কোথাও থাকেনা। মাঝেমধ্যে মেয়েদের বাড়ি বেড়াতে গেলেও বেশিদিন থাকা হয়না। চেয়ারম্যানের দাবি মিথ্যা।
ছাহেরা বেগমের ছেলে জিয়াউর রহমান মাদবর বলেন, তার মা গত দশ বছর ধরে সমাজসেবা অফিসের বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছেন। তবে শেষবার সবাই টাকা পেলেও তার মায়ের টাকা আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন চেয়ারম্যান তার মায়ের বয়স্ক ভাতা স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছে।
ছাহেরা বেগমের আরেক ছেলে বলেন, চেয়ারম্যান কোনোদিনও তাদের ফোন করেনি। আমার মা ছাহেরা বেগমকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেউ ডাকতেও আসেনি। চেয়ারম্যান মেম্বার অথবা চৌকিদারও আমাদের বাড়িতে এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়ারম্যান এসকান্দার ভুঁইয়াকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন বলে জানান। মুঠোফোনে কোনো কথা না বলে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলেও বলেন তিনি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৌরভ রেজা শিহাব বলেন, তিনটি কারণে আমরা ভাতা স্থগিত করে থাকি। বয়স কম, স্থানান্তর ও মৃত্যু জনিত কারণে। প্রতি তিন মাস পরপর উপকারভোগীদের টাকা দেয়ার আগে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর তালিকা পাঠাই। তারা তালিকা যাচাই করে আমাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিলে তারপর আমরা টাকা পাঠাই। স্থানান্তর বলতে যদি কেউ ছয় মাস গ্রামে না থাকে এবং তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয় তাহলেই কেবল আমরা তার ভাতা স্থগিত করি। এবং পরবর্তী মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করি। ছাহেরা বেগমের ভাতা স্থগিত করা হয়েছে চেয়ারম্যানের দেয়া চিঠির ভিত্তিতে।