নিছক একটি কাঠ গোলাপের গল্প
অন্তু রনির ফেসবুক ফ্রেন্ড। মেডিকেল পড়ুয়া অদ্ভুত মায়াবি চেহারা এই মেয়েটাকে দেখলে রনির মাঝে মাঝে মেয়েটার পূর্ব পুরুষের ব্লাডের খোঁজ নিতে ইচ্ছে করে, আসলে সে বাংলাদেশি না ইরানিয়ান না কাশ্মীরি। মাঝে মাঝে তার মাঝে হারিয়ে যাওয়া ৯০দশকের বলিউডে ঝড় তোলা নায়িকা মমতা কুলকানির সাদৃশ্যও খুঁজে পায়। অন্তুর বন্ধু পরিচয়ে একদিন সে ম্যাসেঞ্জারে রনিকে নক দিলো এবং ফেসবুকে বন্ধু হওয়ার জন্য বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো। রনি মেয়েটার প্রোফাইল ঘেটে কোন ছবি না দেখলেও প্রোফাইলের নামটি দেখে মুগন্ধতায় আটকে গেলো এবং তার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো। তারপর কিছু দিন ম্যাসেঞ্জারে ভাবের আদান-প্রদান ও কথার ফুলঝুরি ছুটানোর পর একদিন মেয়েটি অন্তুর সাথে উঠানো একটি ছবি পাঠালো। ছবিটি দেখে রনির মনে হলে গভীর মায়াবি চোখের ও বড্ড আদুরে আদুরে চেহারার এই মেয়েটি একটি কমপ্লিট সুন্দরী বাঙ্গালী নারী প্যাকেজ ঠিক যেন জীবনানন্দরের বনলতা সেন, যাকে দেখে যেকোন বাঙ্গালী প্রেমে পড়তে বাধ্য। তারপর কিছু দিন তার গভীর চোখে ও মায়াবি চাহনিতে ডুবে যাওয়া, হাত ধরে স্বপ্নে ছোটাছুটি, তার ভালোলাগা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে ঘুমে যাওয়া।
তারপর রনিকে ফেরেস্তা ভেবে নিষ্পাপ মেয়েটার ছোট একটি ফাঁদ পাতা, রনির মানুষ হয়ে ফাদে পা দেয়া এবং ভারসাম্য রাখতে না পেরে সমান্তরালে চলা সর্ম্পকের অবনতি এবং শেষে ছন্দপতন। এইভাবেই একটি সুন্দর সর্ম্পকের অপমৃত্যু। এইভাবেই হয়তো ভার্চুয়াল জগতে প্রতিদিন অসংখ্য গল্পের তৈরি হয় এবং অসংখ্য গল্পের সমাপ্তি ঘটে।
আসলে ভার্চুয়াল জগতের সর্ম্পকগুলো হয়তো এমনি, ঠিক যেন গন্ধ ছাড়া কাঠ গোলাপের মতো সুন্দর, বর্ণিল, আলো ছড়ানো কিন্ত বড্ড মায়াহীন, প্রাণহীন, অনুভুতিহীন, ক্ষনস্থায়ী এবং ঠুনকো। অল্পতেই unfriend, block, deactivate নামক কতোগুলো শব্দের মাধ্যমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। যেমনটি ঘটেছে রনি আর রাতের সর্ম্পকে।
আসলে রনিরা চায় এই সর্ম্পকগুলো টিকে থাক কাঠগোলাপ হয়ে নয় সুবাস ছড়ানো লাল গোলাপ হয়ে, যেখান প্রাণ থাকবে, মায়া থাকবে, ভালোবাসা থাকবে। কেননা সর্ম্পকগুলোর মৃত্যু হলেও সর্ম্পকের মানুষগুলোর সাথে কাটানো সেই রাত জেগে শব্দ চালাচালি, বিভিন্ন স্বপ্নের ডালাপালা তৈরি, সেই মায়াবি চাহনি, আদুরে চেহারা, গভীর চোখে হারিয়ে যাওয়া এখনো রনিকে পিছু টানে, টানতে টানতে নিয়ে যায় ফেলা আসা সেই সময়গুলোতে যে সময়গুলোতে সে ব্যস্ত থাকতো ম্যাসেঞ্জারে শব্দ চালাচালিতে। ঠিক যেন সিগারেট খাওয়া মানুষগুলোর সিগারেট ছেড়ে দেয়ার মতো।