লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়াডের
ইউপি সদস্যে বাদশার বাড়িতে ফেনসিডিলের আসর বসেছে এবং সেই আসরে ফেনসিডিল পরিবেশন করছেন তার স্ত্রী, ইতোমধ্যে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সচেতন মহল। তবে ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্যের স্ত্রী স্বপ্না বেগম এক দিন ২০ টাকা কম পাওয়ায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তখন ওই ব্যক্তি বলেন, এখানে প্রশাসন আসে না? স্বপ্না বেগম বলেন, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসনের ক্ষমতা রাখে না। ম্যাজিস্ট্রেট হলে সমস্যা থাকে। তখন স্বপ্না বেগম বলেন, আজ দাম বাড়ানোর জন্য ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে গিয়ে খান। এখানে আসছেন কেন? ইনট্যাক খান, খোলা খাবেন কেন? ওই ব্যক্তি বলেন, সব সময় ইউপি সদস্যের (মেম্বারের) বাড়ি এখানে নিরাপত্তা বেশি। সে জন্য আসি।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ফেনসিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেওয়ার সময় তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের বর্ণনা দেয় এক ক্রেতা। যা শুনে বাদশা তার স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে শাসন করেন। বলেন, ২০ টাকার জন্য তোকে এ কথা বলতে হবে কেন?
এ নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত বাদশা মিয়া। ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে গোড়ল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর আবার শুরু হয় তার মাদক ব্যবসা।
তারা আরও জানান, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন ফেনসিডিল খেতে আসে বাদশার বাড়িতে। সীমান্ত কাছে হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচার করে বাদশার বাড়িতে পাঠায়। তার বাড়ি থেকে ফেনসিডিল চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর এসব নিয়ে কেউই তার ভয়ে মুখ
খোলে না।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক প্রতিবেশী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউপি সদস্য বাদশা মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলে না। বললে মামলা-হামলার ভয় দেখান। এমনকি বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই দামি গাড়িতে করে অনেকেই তার বাড়িতে আসেন মাদক পান করতে। বিষয়টি নিয়ে ৯৯৯ কল দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।দীর্ঘদিন এ ব্যবসারসঙ্গে জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভালো সখ্যতা গড়ে ওঠে বাদশার। তাই মাদক বিক্রেতা ও বহনকারীরা প্রশাসনের হাতে আটক হলেও বাদশা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার এসব কর্মকাণ্ডে এলাকার উঠতি তরুণ সমাজ বিপথে যাচ্ছে।
তবে এসব বিষয়ে জানার জন্য গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা মিয়াকে ফোন করলে তিনি অস্বীকার করে এ প্রতিবেদককে শাসিয়ে বলেন, কার সঙ্গে কথা বলছ? আমাকে চিন? কথাবার্তা ভালো করে বলবা। প্রতিবেদক আপনার বাসায় ফেনসিডিল বিক্রি হয় কি না, এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি ‘জানি না’ বলেই ফোন কেটে দেন।
গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আমিন বলেন, ইউপি সদস্য বাদশাহ বিগত সময় মাদক ব্যবসা করেছিল। এখন করে কি না, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তার একটি ছেলে কারাগারে রয়েছে। তবে কী কারণে জেলে গেছে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বাদশা যদি মাদক ব্যবসা করে, তবে অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক।লালমনিরহাট পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্যের বাড়িতে ফেনসিডিল ব্যবসা হয়, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এখন জানলাম। অবশ্যই দ্রুত অভিযান চালানো হবে।