আফগানিস্তানে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এখন কাবুল নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। ক্ষমতার কেন্দ্রে তারা বসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নানা খবর ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সেখানে তালেবান ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে প্রচার চালিয়ে আসছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। নারী শিক্ষা, মৌলিক অধিকারসহ নানা প্রশ্নে তাদের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন পশ্চিমা নেতারাও।
তবে কাবুল থেকে দেশে ফিরে ভারতের তমাল ভট্টাচার্য নামে এক শিক্ষক শোনালেন তালেবানের ভিন্ন গল্প। কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বাঙালি শিক্ষকের দাবি, ‘অত্যাচার নয়, আঘাত নয়, বরং কাবুল ছাড়ার আগে যথেষ্ট সাহায্যই করে তালেবানরা।’
কলকাতার বাসিন্দা তমাল রোববার (২২ আগস্ট) তার বাড়িতে পৌঁছান। দেশে ফিরলে সাংবাদিকরা সেখানকার অভিজ্ঞতা জানতে চান তার কাছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে তমালকে বলতে শোনা যায়, ‘তালেবানরা ভালো ব্যবহার করেছে, খেতেও দিয়েছিল…। ফেরার আগে তাকে কোনো অসুবিধা হবে না বলেও আশ্বস্ত করে তালেবানরা।’
তরুণ এ শিক্ষক বারবার তালেবানের ‘আন্তরিকতা, সৌজন্য ও সহযোগিতার কথা’ বলেন। এমনকি নারীদের প্রতি তালেবানরা ঠিক কী মনোভাবাপন্ন, সেটাও স্পষ্ট করেন।
তমাল বলেন, ‘আপনারা আফগানিস্তানে না গেলে বুঝবেনই না যে ওখানে কী হয়…তালেবান সম্পর্কে আপনারা যা দেখেছেন…তা সম্পূর্ণ সত্যি নয়…তালেবান নেভার কিলড এনিওয়ান… (তালেবান কখনোই কাউকে হত্যা করেনি)।’
তমাল ভট্টাচার্য জানান, যাদের কাছে পাসপোর্ট ছিল না, তাদেরও নিজেদের দেশে ফিরতে দিয়েছেন তালেবানরা। প্রত্যেককে যেতে দিয়েছে, যেন কারও কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিকে তারা বিশেষ নজর রেখেছিল।
তালেবানের ‘নারী বিদ্বেষী’ তকমা নিয়ে প্রচার প্রসঙ্গে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের এই শিক্ষক বলেন, ‘দ্যাটস অ্যানাদার লাই (এটা আরেকটা মিথ্যাচার)… আমিও যেটা ভাবতাম, তালেবান মানে হচ্ছে প্রচণ্ড রকমের নারীবিদ্বেষী।
নারী স্বাধীনতা তারা মানতে পারেন না। ৯/১১ হওয়ার পর থেকে আমি বিভিন্ন বই পড়েছি। তালেবানরা ইসলামি শরীয়তি আইন মেনে চলেন। সেখানে কখনোই বলা নেই, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না। তালেবানরা সেটাই মেনে চলে। আফগানিস্তানে প্রচুর শিক্ষিত নারী রয়েছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। তাদের কর্মস্থলে যেতে বাধা দিচ্ছেন না তালেবানরা। কেবল হিজাব পরার কথাটা বলেছেন।
কাবুলের সরকারি চ্যানেল থেকে নারী সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে সেটার উত্তরে তমাল বলেন, ‘আমি কাবুলে ছিলাম। কাবুলে তো এমন কিচ্ছু হয়নি।
আমি যে স্কুলে পড়াতাম, সে স্কুলেও প্রচুর নারী শিক্ষকতা করেন। তারা প্রত্যেকেই কাজ করছেন এখনো। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও প্রচুর নারী অধ্যাপনা করছেন, এখনো।
কাবুল বিমানবন্দরে যে হুড়োহুড়ি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাবুল বিমানবন্দর ছিল আমেরিকানদের নিয়ন্ত্রণে। তারা তাদের এতোদিনের মিত্রদের নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বলে সেখানে লোক জমা হয়েছে। যারা মারা গিয়েছেন, সেটা অন্য কারণে। বরং যেন তৃতীয় পক্ষ কিছু না ঘটাতে পারে, সেজন্য সতর্ক ছিল তালেবানরা।
আগামী দিনে কাবুলে ফিরে যেতে চান কি-না জানতে চাইলে তমাল বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ (আমি অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে চাই)।’