বসফরাস প্রণালীর ওপর চাপ কমাতে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২৬ জুন মেগা প্রকল্প চ্যানেল ইস্তাম্বুল উদ্বোধন করেছেন। ‘উন্নয়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এই খাল দেশটির অর্থনীতিতে গতি নিয়ে আসবে। বসফরাস এবং ইস্তাম্বুলের হুমকি মোকাবিলায় এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’ এটি ইস্তাম্বুলকে রক্ষা করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই খালকে স্বপ্নের প্রকল্প দাবি করে এরদোয়ান বলেন, বিরোধীরা বলছে এটা ইস্তাম্বুলের জন্য বিপর্যয়। কিন্তু না, এই খাল তুরস্কের অর্থনীতিতে গতি নিয়ে আসবে। আজ আমরা উন্নয়নের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলাম।
তিনি বলেন, ‘আমি ইস্তাম্বুলে মেয়র থাকা অবস্থায় প্রকল্পটি নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল।’ তিনি ১১ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২৭ শে এপ্রিল জাতির কাছে এটিকে ‘ক্রেজি প্রকল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৩০ দশকে ইস্তাম্বুলের বসফরাস দিয়ে চলাচল করা বার্ষিক জাহাজের সংখ্যা ৩ হাজার থেকে বেড়ে আজ ৪ হাজার ৫০০০ এ পৌঁছেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে ৭৮,০০০ জাহাজ চলাচল করার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। প্রতিটি বড় জাহাজ ইস্তাম্বুলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে জৈব পণ্যগুলিতে বিভিন্ন ধরনের কার্গো বহনকারী জাহাজগুলোর দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, আমাদের সমুদ্রের প্রাকৃতিক জীবন একটি হুমকির মুখোমুখি হয়। জাহাজগুলো উপকূলে আঘাত হানলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মারাত্মক ক্ষতি হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘চ্যানেল ইস্তাম্বুল, বসফরাসের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক রক্ষার জন্য এবং এর আশপাশের নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি অতীব জরুরি। আমরা ইস্তাম্বুলের ভবিষ্যত বাঁচাতে চ্যানেলটি একটি প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করি। ভূমিকম্প হলেও প্রকল্পটি আবাসিক এলাকাগুলোকে সুরক্ষিত রাখবে।’
গবেষণার পরে পাঁচটি ভিন্ন বিকল্পের মধ্যে বর্তমান রুটটি সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত লাইন হিসেবে বেছে নেয়া উচিত বলে জোর দিয়ে, এরদোয়ান বলেন, ‘১১টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন বিজ্ঞানীসহ মোট ২০৪ জন বিশেষজ্ঞ এই প্রকল্পে কাজ করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে চ্যানেল ইস্তাম্বুলের জাহাজের ট্র্যাফিক বসফরাস থেকে ১৩ গুণ বেশি নিরাপদ হবে।’
তিনি বলেন, মেরিনা, কন্টেইনার বন্দর ও লজিস্টিক সেন্টার, যা চ্যানেল থেকে কৃষ্ণ সাগরের প্রস্থানের ঠিক ডানদিকে অবস্থিত হবে। বিনোদন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি অঞ্চল কৃষ্ণ সাগরের প্রস্থানের বামে ইস্তাম্বুলের একটি বিশেষ মান যুক্ত হবে। ৫,০০,০০০ লোকের ধারণক্ষমতা নিয়ে চ্যানেলের দু’পাশে আবাসিক অঞ্চলগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, শহরের কেন্দ্রস্থলের চাপ সরিয়ে দেবে।
এই প্রকল্পটি কেবল তুরস্কেই নয়, পুরো বিশ্বে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি।রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ছয় বছরে প্রকল্পটি শেষ হবে। চ্যানেল ইস্তাম্বুলের মধ্য দিয়ে যাওয়া জাহাজগুলো থেকে প্রাপ্ত আয় এবং বন্দরসহ অন্যান্য উপাদানগুলোর থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে সহজেই এই প্রকল্পের অর্থায়ন করবে। সজলাইডের ব্রিজটি চ্যানেল ইস্তাম্বুলের উপরে নির্মিত ছয়টি সেতুর মধ্যে একটি হতে চলেছে, এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মাইল), ন্যূনতম প্রস্থের ২৭৫ মিটার (৯০২ ফুট) এবং গভীরতা হবে প্রায় ২১ মিটার (৬৯ ফুট)।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সামুদ্রিক পথগুলোর মধ্যে একটি বসফরাস। যাতে ক্রমবর্ধমান জাহাজের ট্র্যাফিকের মধ্যে ইস্তাম্বুলের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে মারমারা সাগরকে কৃষ্ণ সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি বিকল্প রুট হিসেবে চ্যানেল ইস্তাম্বুল প্রকল্পকে এরদোয়ান খুব পছন্দ করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের তহবিলের অনেকাংশ আসবে চীন থেকে। তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লির স্পিকার মোস্তফা সেনটোপ, সহ-রাষ্ট্রপতি ফুয়াত ওকতাই, একে পার্টির উপ-চেয়ারম্যান বিনালি ইয়ালডিরিম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং রাজনীতিবিদরা ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
নগর অধ্যাপক ও সাবেক এমপি মোস্তফা ইলিজালি বলেন, ২০০৫ সাল থেকে সামুদ্রিক ট্র্যাফিক বসফরাসে ৭২ শতাংশ বেড়েছে। ট্যাঙ্কারগুলো সংকীর্ণ স্থানে দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে। অপেক্ষামান জাহাজগুলো সমুদ্রকে দূষিত করে এবং নির্গমন ঘটায়। এই ব্রিজটিসহ মোট ৬টি সেতু নির্মিত হবে, যা প্রায় ২ বছরের মধ্যে শেষ হবে। হাইওয়ের মহাব্যবস্থাপক আবদুল কাদির উরালোলু, যিনি সিএনএন টার্ক স্ক্রিনে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যে সেতুগুলো থেকে কোনো ফি নেয়া হবে না, এবং টোল হাইওয়েতে থাকলে, সেখানে ফি নেয়া হবে।