সবার সামনে কথা বলতে গেলে আমি খুবই ভয় ও লজ্জা পেতাম। সঠিকভাবে বাংলা ভাষায়ই কথা বলতে পারতাম না। এখন সব ভয়-লজ্জা দূর করে আমি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের পাশাপশি ইংরেজিতেও কথা বলতে পারি। তারাও আমার সঙ্গে শুদ্ধ বাংলা বলা সহ ইংরেজিতে কথার জবাব দেয়।’
কথাগুলো বলছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের নোয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার। বাংলা ভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণ ও ইংরেজিতে কথোপকথন শিখতে এখানে শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একই চিত্র উপজেলার প্রায় সবক’টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের। এতে করে পলাশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাষাচর্চা ক্লাব।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এক বছর আগে যোগদানের পর থেকে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলমের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা যাতে নিজের ভাষার মাধুর্য উপলব্ধি ও শুব্ধ উচ্চারণ শেখে এবং আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে ভাষাচর্চার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব চালু করেন।
প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে এই ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে অংশ নেয়। দিন দিন এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে এই ভাষাচর্চা ক্লাবে অংশ নেয়ার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজে ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষকরাও ক্লাস নিচ্ছেন।
ঘোড়াশাল ডাঃ নজরুল বিন নূর মহসিন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম জানায়, আগে আমরা সবার সামনে কবিতা আবৃত্তি ও উপস্থাপনা করতে ভয় পেতাম। শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু ভাষাচর্চা ক্লাবের মাধ্যমে এখন আমাদের আর সমস্যা হচ্ছে না। আমরা শুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও এখন কথা বলতে পারি।
ঘোড়াশাল ডাঃ নজরুল বিন নূর মহসিন গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রিনা নাসরিন বলেন, ভাষাচর্চা ক্লাবের ইংরেজি চর্চায় অংশ নিয়ে ওরা এখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। এতে মাঝেমধ্যে ভুল হচ্ছে। তারপরও শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজি বলায় দারুণভাবে উৎসাহিত হচ্ছে তারা। ভাষাচচা ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবলীলভাবে বিতর্ক, বক্তব্য প্রদান, সৃজনশীল কর্ম তৈরির প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাষাচর্চা ক্লাব উদ্বোধন করার পর থেকে দিনদিনই ক্লাবটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অভিভাবকদেরও আগ্রহ বেড়ে গেছে ভাষাচর্চা ক্লাবে তাদের সন্তানদের ভর্তি করার জন্য।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম বলেন, ছাত্রছাত্রীদের জড়তা কাটানো ও বিদ্যালয়মুখী করা এবং স্মার্ট পলাশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ল্যাংগুয়েজ ক্লাব চালু করি। বর্তমানে উপজেলার ১০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম চালু রয়েছে। স্মার্ট জিপিএস হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রাত্যহিক সমাবেশ ও ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের কার্যক্রম সম্পর্কে তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্ক ক্লাব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২২-২৩ পেয়েছেন পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রবিউল আলম।