ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল এখন এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত—নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী হতে চলেছে?
আগামী ১৬ মার্চ সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কনফারেন্স রুমে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইউজিসির চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই সভায় সাত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে বলে জানা গেছে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এতদিন ধরে পরিচয়ের সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতায় ভোগার পর অবশেষে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় পেতে যাচ্ছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের অন্যতম প্রতিনিধি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী বলেন, ‘সাত কলেজকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কাজ তড়িৎ গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত কে প্রাধান্য দিয়েই যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করছে। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কি নাম ঘোষণা হবে তা আমাদের জানা নেই। তবে নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাতটি কলেজের যাবতীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই নির্ধারণ করা হবে বলে মনে করি।’
সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন বলেন, “প্রতিষ্ঠানের নাম শুধু একটি পরিচিতির মাধ্যম নয়; এটি মর্যাদার প্রতীক। একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নাম শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আমার পছন্দের নাম ইউজিসিতে পাঠিয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান থাকবে, তারা এমন একটি নাম নির্বাচন করবে, যেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিতর্ক বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না।’’
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী স্মৃতি আক্তার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি সাত কলেজের ভবিষ্যতের পরিচয় বহন করবে। এমন একটি নাম প্রয়োজন, যা আমাদের সম্মানিত করবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতিফলন ঘটাবে।”
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের মেহেদি হাসান মেহরাজ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ কেবল একটি পরিচয় নয় এটি তার সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের ভাবমূর্তি প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমন হতে হবে যা গর্বে সঙ্গে উচ্চারণ করা যায়, যা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে সম্মানজনকভাবে তুলে ধরবে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় নিজের বিশ্ববিদালয় কে অনন্য উচ্চতায় দেখাবে।আমি আশা করি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমন হবে যা সাত কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য যথার্থভাবে প্রকাশ করবে।’
ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। একাধিকবার তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন কিন্তু তাদের দাবি পূরণ হয়নি অবশেষে এখন তারা তাদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস পেয়েছেন। পরীক্ষার ফল বিপর্যয়, শিক্ষক সংকট, পাঠদানের সমস্যাসহ নানা ইস্যুতে ভোগান্তি তে ছিলো সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অবশেষে সরকার তাদের দাবি বাস্তবায়নের পথে এগিয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক দুর্ভোগ কমবে, শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন একটাই—সাত কলেজের ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতিফলন ঘটিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী হবে? সেই উত্তর মিলবে আগামী ১৬ মার্চ।
শান্তা আক্তার
বাঙলা কলেজে প্রতিনিধি