নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা আতঙ্কে আছেন বলেও তারা জানিয়েছেন। গত সোমবার বিকেলে আচরণবিধি পালন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় প্রার্থীরা এসব অভিযোগ করেন।
লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার সব ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর এ উপজেলার ১২টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নলদী ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা দুদিন আমার ও আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে। নৌকার প্রার্থী ছাড়া মাঠে আর কোনো প্রার্থী থাকবে না, পথসভায় এভাবে বক্তব্য দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এক ট্রাক বইঠা এনে তারা মজুত করেছে। টেবিলে প্রকাশ্যে ভোট হবে, ভোটারদের কাছে এ কথা বলে বেড়াচ্ছে।’
ব্যালট পেপার নির্বাচনের দিন সকালবেলা দেওয়ার দাবি জানিয়ে কাশিপুর ইউপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আজিজুর রহমান বলেন, ভোট কেটেছিঁড়ে নেওয়া হবে। টেবিলের ওপর ভোট দিতে হবে। এসব কথা বলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কোটাকোল ইউপির জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুহাম্মদ সাদেকুর রহমান বলেন, নৌকার বাইরে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবে না বলে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ দিকে দিঘলিয়া ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তরিকুল ওসমান বলেন, দিঘলিয়া কলেজ ও স্কুল কেন্দ্রে গতবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবারও সেই আশঙ্কা আছে। সেখানকার ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘ভোট টেবিলেই হবে, তবে গোপন কক্ষে। যদি কেউ মনে করেন, ভোট কেড়ে নিয়ে বিজয়ী হবেন, তাহলে সেই চিন্তা বাদ দেন। এ স্বপ্ন দেখবেন না। ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন।’
ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট দিতেন পারেন, সে রকম পরিবেশ তৈরি করা হবে বলে পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৭ আনসার সদস্য ও ৫ পুলিশ সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশের একাধিক ভ্রাম্যমাণ দল ও গোয়েন্দা পুলিশের টহল থাকবে। র্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় থাকবেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে প্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘ব্যালট পেপার ভোটের আগের দিন আসুক, এটা কে কে চান ? যাঁরা চান, তাঁরা হাত তোলেন।’
এ সময় প্রার্থীদের মধ্যে কেউই হাত তোলেননি। এরপর জেলা প্রশাসক বলেন, তাহলে ব্যালট পেপার সকালে দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনেরও একই সিদ্ধান্ত। নির্বাচন নিয়ে যত শঙ্কাই প্রকাশ করেন না কেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উল্লাহর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানজিলা সিদ্দিকা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোসলিনা পারভীন, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু হেনা প্রমুখ।