বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সিংড়ায় হজ্ব গমনে ইচ্ছুক হাজীদের সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ  কক্সবাজার জেলায় ১০ম বারের মতো শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারি অফিসার মহসিন ও শ্রেষ্ঠ অস্ত্র উদ্ধারকারী সোলায়মান লোহাগড়ায় নবগঙ্গা ডিগ্রী কলেজের দূর্নীতিবাজ সভাপতি রাশিদুল বাশার ডলারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সী নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  মিল্টন ব্লেড-ছুরি দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন, তথ্য জানালো ডিবি মধুখালিতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা বিএনপির দন্তত কমিটির বিচার দাবি লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ  লোহাগড়ায় বিএনপির উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি- স্যালাইন ও বিস্কুট বিতরণ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি শিক্ষার্থীবান্ধব হবে কবে? ঈদগাঁও উপজেলার নির্বাচনে সুবিধাজনক স্থানে আবু তালেব, লড়ে যাবেন সেলিম আকবর এবং শামশু।

মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের কর্তা আর দালাল সিন্ডিকেটে নাজেহাল সেবাপ্রার্থী।

বাবুল আহমেদ মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি,
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে স্বাভাবিক নিয়মে পাসপোর্ট পাওয়া যেনো সোনার হরিন। সবকিছু ঠিক থাকার পরও অফিস কর্তাদের নানা টালবাহানা আর ভুল ধরার কারনে ভুক্তভোগীরা দালালদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। দালাল ছাড়া নিজে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট ডেলিভারিতে লাগছে অতিরিক্ত সময়। ফলে অফিস কর্তাদের হয়রানি এড়াতে ও নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পেতে সেবা প্রার্থীরা বাধ্য হয়ে দালালদের বাড়তি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করাচ্ছেন।

এদিকে দালালদের মাধ্যমে করানো প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে নির্ধারিত হারের ঘুষের টাকা চলে যাচ্ছে অফিস কর্তা ব্যক্তিদের পকেটে। এসব টাকা অফিসের আনসার থেকে শুরু করে করে অফিসের কর্মকর্তার পকেটে বন্টন হয়ে যায়। দালাল ও অফিস কর্তাদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সেবা প্রার্থীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কার্যালয় ঘুরে অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা প্রতিটি ই-পাসপোর্ট থেকে নির্ধারিত এক হাজার টাকা অফিস কর্তাদের ঘুষ দিয়ে থাকেন। ফলে সেবা গ্রহীতা অফিসে আবেদন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ছবি তোলা ও পাসপোর্ট ডেলিভারি পর্যন্ত সকল কাজ হয়রানি ছাড়াই করতে পারেন। এছাড়া ছোটখাটো কোন ভুল থাকলেও সেগুলোতে ছাড় দেওয়া হয়। তবে বড় ধরনের কোন ভুল থাকলে নির্ধারিত এক হাজার টাকার বাইরে আরো টাকা দিতে হয়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান হলে দালালরা অফিস স্টাফদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব কাজ করেন। পছন্দের সেবাপ্রার্থী গেটে প্রবেশের সাথে তার নাম, চেহারার ধরন, জামা কাপড়ের রংসহ সকল বর্ননা মোবাইলে অফিসে জানিয়ে দেন। প্রশাসনের নজরদারি কমে গেলে বা সেবাপ্রার্থীর জরুরি প্রয়োজনে তখন দালালেরা নিজেরাও অফিসে যাতায়াত করে থাকেন।

সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যায়। দালাল দিয়ে কাজ না করায় এ অফিসের গেট থেকে শুরু করে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমার ভোটার আইডি কার্ড থাকলেও স্মার্ট কার্ড না থাকায় নতুন পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানায়। অনেক হয়রানির পর ফিঙ্গার ও ছবি তোলার সুযোগ পাই। তবে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও আমার পাসপোর্ট হাতে পায়নি। পাসপোর্ট পেতে কয়েক মাস দেরি হবে বলে তারা জানায়। পরে বাধ্য হয়ে অফিস থেকে বের হয়ে দালালের শরনাপন্ন হয়। দালাল অফিসের সাথে যোগাযোগ করে পনেরশো টাকার বিনিময়ে মাত্র একদিনে পাসপোর্ট ডেলিভারি করিয়ে দেয়।

সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ এলাকার এখলাস মিয়া বলেন, মেয়েকে বিদেশ পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করতে হচ্ছে। নিজেরা এলে হয়রানি হয়। তাই এলাকার একজন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়েছি। নরমাল পাসপোর্টের জন্য দালালকে ৬ হাজার পাঁচশো টাকা দিয়েছি। দালাল পাসপোর্ট অফিসের লোকদের ফোন করে সব বলে দেওয়ায় কোন সমস্যা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল বলেন, সাধারন মানুষ পাসপোর্ট করতে গেলে অফিসের লোকেরা ছোটখাতো ভুল ধরে ফেলে। এছাড়া অনেক সময় তাদের হয়রানি ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে সেবা গ্রহীতারা আমাদের কাছে আসে। পাসপোর্টের মেয়াদ, সাধারন ও জরুরি অনুয়ায়ী ব্যাংক ড্রাফট ও পাসপোর্ট অফিস খরচ রাখি। সব ঠিক থাকলে পাসপোর্ট অফিসে এক হাজার টাকা দিতে হয়। অফিসের বড় কর্তা পাঁচশো টাকা রাখেন আর বাকি পাঁচশো স্টাফদের মাঝে নির্ধারিত হারে ভাগ হয়ে যায়। তবে বড় কর্তা আমাদের হাত দিয়ে টাকা লেনদেন করেন না। আমরা অফিস স্টাফদের টাকা দেই। আর বিশ্বস্ত অফিস স্টাফরা বড় কর্তাকে টাকা দেয়। আর কোন পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোন ঝামেলা থাকলে সেগুলো কন্টাক অনুয়ায়ী টাকার অংক বেড়ে যায়। ব্যাংক ড্রাফট ও অফিস খরচের পর কিছু টাকা আমাদের থাকে। আমাদের চেয়ে অফিস কর্তাদের বেশি লাভ। প্রতিজন দালাল দিনে ৩/৪ টি পাসপোর্টের কাজ পান। কোনদিন অনেকেই কোন কাজ পান না। তবে প্রতিদিন প্রায় প্রতি পাসপোর্ট থেকেই অফিসের লোকজন টাকা পেয়ে থাকেন।
এসব বিষয়ে জানতে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য না দিলেও সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ,দৈনিক সংগ্রাম প্রতিনিন কে বলেন, দালাল চক্রটি বন্ধ করতে বিভিন্ন সময় অভিযান হয়েছে। দ্রুত এ চক্রটি বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যদি এসব কার্যক্রমের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কেউ জড়িত থাকেন তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..