নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে প্রেমের সূত্র ধরে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার
নিজগাবী গ্রামের মো. শাহজাহান মেম্বারের ছেলে আজিজুল ইসলাম (১৮), একই গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে মো. রফিক (২৪) ও মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. সাকিব মিয়া (২৬)। তারা সবাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।
আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোরে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার নিজগাবী গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী কিশোরী (১৭) মোহনগঞ্জ পৌর শহরের কাজিয়াটি গ্রামের বাসিন্দা। কিছুদিন মাদরাসায় পড়াশোনা করে ছেড়ে দিয়ে পরে বাসায় অবস্থান করছিলো।
মামলার অভিযোগ ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রী আজিজুলের সাথে ৩-৪ মাস আগে ইমুতে কথোপকথনের সূত্র ধরে ওই কিশোরীর পরিচয় হয়। তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। গত (১৬ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে আজিজুল ওই কিশোরীকে বিয়ে করার প্রলোভনে মোহনগঞ্জ শহরের আলোকদিয়া সেতুর ওপর ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আজিজুল আর রফিক মিলে মোটরসাইকেলে করে ওই কিশোরীকে ধর্মপাশা উপজেলার নিজগাবী গ্রামের সামনের হাওরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলেফোনে ভিডিও ধারণ করে। কিছু সময় পর সাকিব সেখানে যায়, পরে সাবিকও তাকে ধর্ষণ করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাতভর ধর্ষণ শেষে ভোরে ওই কিশোরীকে তার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় ওই তিনজন। সেইসাথে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য তারা ওই কিশোরীকে শাসিয়ে যায়। অন্যথায় ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এদিকে ভয়ে ঘটনা চেপে থাকে ওই কিশোরী। পরে শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। ঘটনা শুনে গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই। অভিযোগ পেয়ে ভোরে অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ধর্ষণ ও এ ঘটনার ভিডিও ধারণের বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্ত আজিজুল ইসলাম জানায়, আমরা তিনজনই রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। প্রেমের সম্পর্কের সূত্রেই ওই মেয়েকে সেদিন রাতে তুলে নিয়ে যাই। পরে হাওরে নিয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণ করি। আমরা মজা করেই একে অন্যর ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করি। পরে ডিলেট করে দিয়েছি।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী কিশোরীর বড় ভাই বলেন, এটি একটি জঘন্য ঘটনা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। এ ঘটনায় পুলিশ দ্রুত অ্যাকশন নিয়েছে।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েই দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছি। অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাইয়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মধ্যরাত থেকেই তাদের ধরতে অভিযান শুরু করি। শুধুমাত্র আজিজুলের মোবাইল নাম্বার আমাদের হাতে ছিলো। প্রথমে আজিজুলকে গ্রেপ্তার করি। তারপর কৌশলে তাকে দিয়েই মোবাইলে কল করিয়ে ওই দু’জনকে নির্দৃিষ্ট জায়গায় এনে গ্রেপ্তার করা হয়।