পিবিআই, ময়মনসিংহ কর্তৃক হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ গ্রেফতার-০৪ জন আসামী
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ধানক্ষেতে পাওয়া লাশ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তসহ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা। অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির নাম মোঃ আরিফুর রহমান (৪৬), পিতাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাতাঃ খোদেজা খানম, গ্রামঃ লামচরী, থানাঃ রায়পুর, জেলাঃ লক্ষীপুর। জানা যায়, তিনি লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ৬নং পূর্ব কেরোয়া ইউনিয়নের রানিং মেম্বার। ঘটনার সাথে জড়িত অপহরণ চক্রের ০৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ০৩/০১/২০২৫ তারিখ অনুমান ০৩.০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন দাপুনিয়া খেজুরতলা মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আসামী ০১। আশিকুর রহমান (৩৫), ২। রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), ৩। মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯) এবং ৪। মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫)।
গত ০১/০১/২০২৫ তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকায় থানা পুলিশের মাধ্যমে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা সংবাদ পায় তারাকান্দা থানাধীন পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে। পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা খবরটি মৃতের পরিবারকে জানিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনায় থানা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি পিবিআই ময়মনসিংহ জেলাও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভিকটিমের স্ত্রী আয়শা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে তারাকান্দা থানার মামলা নং-০১, তাং-০২/০১/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দায়ের করলে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি (চলতি দায়িত্বে) জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল এর নির্দেশনায় পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) জনাব মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন এর নেতৃত্বে পিবিআই ময়মনসিংহের চৌকস টিম তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাত আসামীদের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হন। তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৩/০১/২০২৫ তারিখ অনুমান ০৩.০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন দাপুনিয়া খেজুরতলা মোড় এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী ০১। আশিকুর রহমান (৩৫) পিতা-মোঃ সোলায়মান, মাতা-মৃত নাজমা বেগম সাং-কুতুবপুর, পোস্ট-শিবচর, থানা-শিবচর, জেলা-মাদারীপুর; ২। রাহাত হোসেন তন্ময় (২৫), পিতা-ইসমাইল হোসেন, মাতা-সুলতানা রাজিয়া, সাং-কুমারগাতি, থানা-হালুয়াঘাট, জেলা-ময়মনসিংহ; ৩। মোঃ পরশ চৌধুরী শ্রাবণ (২৯), পিতা-মৃত দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, মাতা-রুকসানা আক্তার, সাং-গনেশপুর, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-রংপুর ও ৪। মোঃ এহতেশামুল হক নিশাত (২৫), পিতা-মোঃ এমদাদুল হক, মাতা-জোৎন্সা আরা বেগম, সাং-রূপচন্দ্রপুর, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহদের গ্রেফতার করা হয়। অপরাধে ব্যবহৃত হায়েস গাড়টি আলামত হিসেবে ঢাকা থেকে জব্দ করা হয়। গত ০৩/০১/২০২৪ তারিখে গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ রকিবুল আক্তার জানান, আসামীরা অপহরণ চক্রের সদস্য। আসামী শ্রাবণ ঢাকায় অবস্থানরত লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ৬নং পূর্ব কেরোয়া ইউনিয়নের মেম্বার ও ফার্ণিচার ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান এর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সাজায়। গত ২৫/১২/২০২৪ তারিখে আসামী শ্রাবণ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসে এবং অবস্থান করে। এরপর গত ৩১/১২/২০২৪ তারিখে ময়মনসিংহ হতে তার বন্ধু তন্ময় ও নিশাতকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর চলে যায়। সেখানে গিয়ে আসামী শ্রাবণ সুকৌশলে ভিকটিম আরিফুর রহমানকে মিরপুর—১ নম্বর এলাকা থেকে ডেকে নেয়। ভিকটিম আরিফুর রহমান সেখানে আসামাত্র আসামী শ্রাবণ, আশিক, তন্ময় ও নিশাত মিলে তাকে ধরে ফেলে এবং প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের পূর্ব হতেই ভাড়া করে রাখা হায়েস গাড়ীতে উঠতে বলে। আরিফুর রহমান গাড়ীতে উঠামাত্রই তারা ময়মনসিংহের দিকে রওনা করে। আসামীরা জিম্মি আরিফুর রহমানকে বাধ্য করে তার স্ত্রীর কাছে মোবাইল ফোনে কল করতে এবং টাকা পাঠানোর জন্য এসএমএস করতে। বিকাশ নম্বর হিসেবে আসামী আশিকের একটি নম্বর দেয়। গাজীপুরে জ্যামে গাড়ী আটকে গেলে ভিকটিম নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে আসামীরা অপহরণের বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য ভিকটিমকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে হত্যা করে তারাকান্দার পিঠাসুতাগামী পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায়।
পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার সকল অফিসার ও ফোর্সের দক্ষতা, নিরলস প্রচেষ্টা ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগিতায় মাত্র দুই দিনের মধ্যেই হত্যাকান্ডের আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..