তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব কেন তলব করা হয়েছে, এটা আমারও প্রশ্ন। তা জানতে চাই আমিও। সাংবাদিক নেতাদের যে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, সেটি আপনাদের মতো আমিও পত্রিকার পাতায় দেখেছি। খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার অবশ্যই যে কারও ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব তলব করতেই পারে। এমডিদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়, রাজনৈতিক নেতাদের তলব করা হয়, ব্যবসায়ীদেরও করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব কেন তলব করা হলো, এটি আমার প্রশ্ন। তবে আমি মনে করি, এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে বার্ষিক সাধারণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম। সভায় সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম। সভার একটি অধিবেশন পরিচালনা করেন সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেই টেলিভিশন ও পত্রিকাসহ গণমাধ্যমের বিশৃঙ্খলা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে আইনটি কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। আইপি টেলিভিশনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যেই ১২০টি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য স্থায়ী সহায়তার ব্যবস্থা করতে চান প্রধানমন্ত্রী। সেজন্যই কল্যাণ ট্রাস্ট করেছেন। এটা এখন সাংবাদিকদের অন্যতম ভরসার জায়গা তৈরি করেছে। আগামী দিনে সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও সহায়তার ব্যবস্থা করব। এ বিষয়ে বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীতের সরকারগুলো নিজেদের স্বার্থে সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থেই কাজে লাগাচ্ছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রসহ দেশের যে কোনো সংকটময় সময়ে সাংবাদিকরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেও সঠিক খবর প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনাকে সাহস জুগিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, করোনার কারণে বাংলাদেশের ২-৩ কোটি লোক অনাহারে মারা যাবেন। অনেকে এটি চেয়েছিলেনও। সেটি হয়নি। আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে, বিনিয়োগ বেড়েছে। এদেশ ছোট হলেও পৃথিবীতে মর্যাদা অর্জন করেছে। ফলে জাতিসংঘ সম্মেলনে বিশ্বের অল্পকিছু দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও রয়েছেন। আমাদেরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
সাইফুল আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, সাংবাদিকদের যত সংগঠন রয়েছে তার মূল সংগঠনই হচ্ছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির ক্ষেত্রে এই সংগঠন সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। করোনার সময় গণমাধ্যম প্রচণ্ড চাপে ছিল, চাপে ছিলেন সাংবাদিকরাও। ধীরে ধীরে সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে গণমাধ্যম। করোনা মহামারিতে প্রধানমন্ত্রী নানা কর্মসূচি দিয়েছেন। সাংবাদিকদের খোঁজখবর নিয়েছেন, প্রণোদনা দিয়েছেন। গত এক বছর আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গৌরবের ছিল। একদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। ডিইউজের নেতারা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সংগঠনকে এই জায়গায় এনেছেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া দরকার। আমাদের রুটি-রুজির সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
সুএ,যুগান্তর