আছিয়ার মৃত্যুতে শোক এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বহ্নিশিখা ও গ্রীন ভয়েস এর প্রতিবাদ কর্মসূচি
আজ ১৪ মার্চ ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস এবং এর নারী ও শিশু অধিকার সংক্রান্ত উপদল বন্নিশিখা-এর উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আছিয়ার নির্মম হত্যার বিরুদ্ধে শোক প্রকাশ ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শতাধিক মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় সংগঠক ফাহমিদা নাজনীন-এর সঞ্চালনায় এবং মোনছেফা তৃপ্তি-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন গ্রীন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক শামীমা মাহবুব ডলি, যুগ্ম আহ্বায়ক জহির রায়হান, গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম রাতুল ও শাকিল কবির, রাজশাহী বিভাগের সহ-সমন্বয়ক আব্দুর রহিম, ঢাকা কলেজ শাখার আসাদুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের রাফিকা ইসলাম রিতু, আসফিয়া তাসনিম মুনা ও মোহনা আক্তার জাকিয়া প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে নিম্নলিখিত দাবিগুলো উপস্থাপন করেন:
নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি উপজেলায় ডিএনএ পরীক্ষা নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে, থানায় মামলা দায়েরের সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে, ধর্ষণের শিকার নারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে তাদের জবানবন্দি নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে দ্রুত তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
গ্রীন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও, নারী নির্যাতনকারীদের হাত থেকে মুক্তি পাইনি। দেশজুড়ে আছিয়ার মতো অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।”
মোনছেফা তৃপ্তি বলেন, “ধর্ষণকে এখনো গুরতর অপরাধ হিসেবে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ধর্ষকেরা আইনের ফাঁকফোকর গলে জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়ায়, অথচ ভুক্তভোগী পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটায়। দ্রুত বিচার কার্যকর করা এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
শামীমা মাহবুব ডলি বলেন, “নারীরা ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয় না। আজ আছিয়াকে হত্যা করা হয়েছে, কাল হয়তো আপনার মেয়েকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
তারিকুল ইসলাম রাতুল বলেন, “নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
সমাবেশ শেষে উপস্থিত সকলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে আছিয়ার স্মরণে শোক প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ধর্ষকের প্রতীকী পুত্তলিকা ফাঁসি দেওয়া হয়। আছিয়ার শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা হয়।
এছাড়াও, ঢাকা সহ সারাদেশে গ্রীন ভয়েসের ৫০টিরও বেশি ইউনিট একযোগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে।
বহ্নিশিখা বিশ্বাস করে, নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটাতে হলে কেবলমাত্র আইনি কাঠামোর উন্নতি যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা, নৈতিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ আন্দোলন কেবল শুরু, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গ্রীন ভয়েস ও বহ্নিশিখা তাদের লড়াই চালিয়ে যাবে।