মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৫২ অপরাহ্ন , ই-পেপার

সার্জিস আলমকে বান্দরবানের জনগণের কাছে প্রকাশ্যে, আনুষ্ঠানিকভাবে ও নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।

বিশেষ প্রতিনিদি
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

বান্দরবানকে ‘শাস্তির জায়গা’ বলাকে বান্দরবান সহ সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি চরম অবমাননা হিসেবে দেখছে ছাত্রসমাজ —NCP নেতা সার্জিস আলমকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে,অন্যথায় এনসিপিকে বান্দরবানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ ২০ জুলাই বান্দরবান প্রেস ক্লাবে সকাল ১১.৩০ টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বান্দরবান ছাত্রসমাজ এই ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত ৩ জুলাই পঞ্চগড়ের “জুলাই পদযাত্রা” চলাকালে এনসিপি নেতা সার্জিস আলম একটি বক্তব্যে বান্দরবানকে “শাস্তিস্বরূপ চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাঠানোর জায়গা” হিসেবে উল্লেখ করেন। এই মন্তব্য শুধুমাত্র দুঃখজনক নয়—এটি চরম নিন্দনীয়, অবমাননাকর ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য। একজন জাতীয় নেতার মুখে এ ধরনের কটূক্তি একটি জেলার মর্যাদাকে হেয় করার পাশাপাশি গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও অবহেলার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

বান্দরবান কোনো বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল নয়—এটি জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এক জনপদ। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও অধিকার সচেতন। এই জেলার মর্যাদাকে অপরাধীদের শাস্তির স্থান হিসেবে উল্লেখ করা মানে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে অপমান করা।

আমরা, বান্দরবান ছাত্রসমাজ, সার্জিস আলমের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। বিষয়টি জানার পর (৪ জুলাই কালের কণ্ঠের ভিডিওর মাধ্যমে) আমরা স্থানীয় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেন যে ১৯ জুলাই বান্দরবানে অনুষ্ঠিত “জুলাই পদযাত্রা” অনুষ্ঠানে সার্জিস আলম জনসম্মুখে ক্ষমা চাইবেন। এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে না গিয়ে শান্ত থেকেছি।

কিন্তু বাস্তবে ঘটে তার বিপরীত। সার্জিস আলম উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিতই ছিলেন না, এবং দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এই বিষয়ে একবাক্যও বলেননি। বরং অনুষ্ঠান শেষে আমরা মঞ্চে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি স্মরণ করালে তারা কর্ণপাত না করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা, বান্দরবান ছাত্রসমাজ, নিম্নোক্ত দাবিগুলো উত্থাপন করছি—

১. সার্জিস আলমকে বান্দরবানের জনগণের কাছে প্রকাশ্যে, আনুষ্ঠানিকভাবে ও নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বান্দরবানে এনসিপি’র সকল কার্যক্রম ও উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
৩. যেসব সরকারি কর্মকর্তা “শাস্তিস্বরূপ বদলি” হিসেবে বান্দরবানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপমানজনক বদলির চর্চা বন্ধ করতে হবে।

৪. পার্বত্য চট্টগ্রামকে “বিপজ্জনক” বা “চাঁদাবাজ/দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জায়গা” হিসেবে উপস্থাপন রোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই—বান্দরবানকে অবমূল্যায়ন বা অবমাননা করা হলে আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিকভাবে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তবে কোনো দলের নেতা যদি জনপদের সম্মানহানি করেন, তাকে মেনে নেওয়া হবে না।
আমরা কারো দয়া চাই না, আমরা চাই সম্মান।
বান্দরবানকে অবজ্ঞা করা মানে আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি আসিফ ইকবাল, আমিনুল ইসলাম, খালিদ বিন নজরুল, হাবিব আল মাহমুদ, জুবায়ের হোসেন, রাশেদুল ইসলাম, হাসান আল বান্না, জয়নাল আবেদীন, তারেকুল ইসলাম সহ প্রমুখ।

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..