তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দ্রুত পাস করার জোর দাবি জানিয়েছে তামাক বিরোধী শিক্ষক ফোরাম, মায়েদের ফোরাম এবং তরুণ ফোরাম। ২৬ এপ্রিল, (শনিবার) সকাল ১১টায় ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি উত্থাপন করেন। তামাকজাত দ্রব্যের ভয়াবহ ক্ষতি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস না করলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব হবে না।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্নিগ্ধা বাউল, উপপরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়াও জান্নাতুল ফেরদৌস, গবেষণা কর্মকর্তা, নারী বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর রিপ্রেজেন্ন্টেটিভ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এবং উপস্থিত ছিলেন তামাক বিরোধী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ডঃ খালেদা ইসলাম এবং তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক শিবানী ভট্টাচার্য।
“বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ্য মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন বলে জানান শিবানী ভট্টাচার্য । তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের প্রায় অর্ধেক (৪৯.০%) রেস্তোরাঁয় এবং ৪৪.০% গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হন। নারী ও শিশুরা এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পরোক্ষ ধূমপান নারীদের জন্য গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে, শিশুদের ক্ষেত্রে এটি শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা, বুদ্ধি ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি নবজাতকদের ক্ষেত্রে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। অতএব, নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁ ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করার জোর দাবি জানাচ্ছি”
ডঃ খালেদা ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “আজকাল তরুণ সমাজ তামাক পণ্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের পড়াশোনা ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছর) মধ্যে ৬.৯% শিক্ষার্থী কোনো না কোনো ধরনের তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে থাকে, যার মধ্যে ছেলেদের হার ৯.২% এবং মেয়েদের হার ২.৮%। এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বর্তমানে তামাক কোম্পানিগুলো নতুন নতুন কৌশলে ই-সিগারেটের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে। এই ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং তরুণদের নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
তরুণ ফোরামের আহ্বায়ক আশরাফিয়া জান্নাত বলেন, “গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী আমাদের দেশে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারনে সৃষ্ট রোগে ভুগছে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে একটি আইন কতটা জীবনঘনিষ্ঠ হতে পারে। তাই আমরা তরুণ সমাজ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষায় এই সংশোধনী যেন আর বিলম্ব না হয়।”
সভার মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাসরিন আক্তার, তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি। সংশোধনীগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা।
২. তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
৩. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
৪. তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৫. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৬. ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকসহ তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, শিক্ষক ফোরাম এবং তরুণ ফোরামের প্রতিনিধিরা।