মিল্টনের তথ্য জানালো ডিবি
মিল্টনের ‘পৈশাচিকতার’ তথ্য জানালো ডিবি
মানুষের হাত-পা কেটে ‘পৈশাচিক আনন্দ’ পেতেন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের চেয়ারম্যান আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার। তার আশ্রমে আশ্রয় নিতে গরিব-অসহায় মানুষের শরীরে পচনের কারণে যখনই সার্জারির দরকার হতো তখন নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতেন।
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
রোববার রাজধানীরি মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকেদের এসব কথা জানিয়েছেন আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার! এতে অসহায় মানুষগুলো অমানবিক কষ্ট পেতেন, আর্তনাথ করতেন। কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন। সে রীতিমতো টর্চার সেল চালাতো। রবিবার (৫ মে) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে নির্যাতন করে, ব্লেড-ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ রতেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরি জব্দ করেছি।
হারুন আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। একটি দুটি অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তো ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনও এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতোগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়েই নিজেই অপারেশন করাতেন। এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজড করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কে এই মিল্টন সমাদ্দারকে এই মিল্টন সমাদ্দার
হারুন বলেন, যে ছেলেটা সেই উজিরপুর থেকে বাবা পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। যেখানে সে অসহায়, গরীব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেইসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে।
তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে নিজেই প্রচার করতো উল্লেখ করে হারুন বলেন, মানুষগুলো মারা গেছেন। জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যেভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, ৯০০ মরদেহ দাফন করা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিল্টন জানান, তিনি ১০০ জন মানুষকে দাফন করেছেন। তবে এর তথ্য–প্রমাণ দিতে পারেননি।
যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিলো তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেয়া হতো না স্বজনদের। ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিলো? বিক্রি করতো? সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন। সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম মিল্টন সমাদ্দার বাংলাদেশে যদি আরও থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, অটিজম শিশুদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। অটিজমের নাম ধারণ করে অসহায়, বাক প্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন মানুষ সংগ্রহ করে ফেসবুকে প্রচার করে ফলোয়ারদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে তিনি সেই টাকা খরচ করেননি। এটা তো লজ্জাজনক।
মিল্টনের স্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না’
এদিকে মিল্টনের স্ত্রী মিতু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সে বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও দায় এড়াতে পারে না।
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সেসবের সঙ্গে স্ত্রী মিঠু হালদারের কোনো বা সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, দিনের পর দিন রাতের পর রাত এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ, আর্তমানবতার তথাকথিত সেবার নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যেসব রোগীকে দেখিয়ে টাকা আয় করেছেন, অথচ তাদের সেবাযত্ন করেননি, ডাক্তারের কাছে পাঠাননি। সেখানে তো স্ত্রী মিতু হালদার যেতেন। তিনি নিজেও তো নার্স। তাহলে স্বামীর অনিয়ম অপকর্ম জেনেও থানা-পুলিশ বা কাউকে অবগত করেন নাই। প্রতিবাদ করেন নাই। স্বামীর অপকর্মের দায় তাই স্ত্রী হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না।তবে তিনি দাবি করেছেন, ফাউন্ডেশনের নামে যেসব টাকা পয়সা এসেছে, অ্যাকাউন্ট বা কোনো কিছুতে তার নাম (মিতু হালদার)