বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন , ই-পেপার
শিরোনামঃ
মাদারগঞ্জে বাজার মনিটরিং অভিযানে ব্যবসায়ীকে জরিমানা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুর্নী‌তির দায়ে নগদ অর্থসহ ৩ জনকে আটক করেছে সেনাবা‌হিনী নড়াইলে অতিরিক্ত মদ্যপানে স্কুল ছাত্রীর মৃ’ত্যু হাসপাতালে ভর্তি ১ দুই জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যুর সনদ পত্র দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ভালুকায় পৌর বিএনপির দোয়া মাহফিল বাগেরহাট জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “জাতীয় শিশু কিশোর ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা দেশীয় অস্ত্রসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক যুবলীগ নেতা সাইফুল সোহাগকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নরসিংদী সাবেক এমপি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা গ্রেপ্তার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

সাতক্ষীরা ২২ তারিখে পানি দিবসকে সামনে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট,

মোঃহাবিবুর রহমান পলাশ সাতক্ষীরা
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট,জেলার অর্ধেক মানুষ পান করতে পারছেননা সুপেয় পানি।

গ্রীস্মের শুরুতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বেড়িবাঁধ ভেঙে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া ও ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় দুস্কর হয়ে পড়েছে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ। বেঁচে থাকার তাগিদে দূষিত পানি পান করায় পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এলাকার মানুষদের বাচাতে সরকারিভাবে নির্মিত হোক বড়ধরণের জলাধার বা পানির প্লান্ট।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬০ ভাগ মানুষ সূপেয় পানি পাচ্ছে। বাকী ৪০ ভাগ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে,নতুন করে গভীর-অগভীর নলকুপ স্থাপন,রেইন ওয়াটার হারভেস্টার,আরও প্লান্ট (রিভার্স অসমোসিস) ও এআইআরপি (আর্সেনিক,আয়রন রিমুভাল) প্লান্ট নির্মাণ ইত্যাদি।
তবে সরকারিভাবে ৬০ ভাগ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার কথা বলা হলেও সুপেয় পানি পান করতে পারছেননা ৫০ ভাগের বেশী মানুষ। সংস্কারের অভাবে উপকুলীয় এলাকায় সরকারিভাবে বসানো ৬শ’ ৫০টি পিএসএফের অধিকাংশ অকেজো হয়ে আছে। জেলা পরিষদের অধীনে ৭৩টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। তবে কাজ হাতে নেয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকায় দেখা যায়, কয়েক কি: মি: দুর থেকে পানি আনতে যেয়ে ক্লান্ত গাঁয়ের মহিলারা। বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে জলাশয় লবনাক্ত হওয়ায় বে-সরকারি একটি সংস্থার সরবরাহ করা জারের পানিই ভরসা এসব পরিবারের। এছাড়া এক কলস পানি আনতে যেয়ে একবেলাই কেটে যায় তাদের। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগবাসির নিত্যঘটনা।
২০০৯ সালে আইলার তান্ডবের পর থেকে সুপেয় পানির সংকট শ্যামনগর,আশাশুনি ও কালিগঞ্জ জুড়ে। তবে শ্যামনগরে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে সুপেয় পানির উৎস। বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুকুরের পানি ফিল্টারিং করে ব্যবহার করতেন স্থানীয়রা। তবে গতবছর শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ্এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানি ঢোকায় সেসব পানিও এখন পানের অযোগ্য।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকার সেতু দাস জানান,খোলপেটুয়া নদীর দুর্গাবাটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ
ভাঙনের কারণে আমাদের জলের প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। দুর্গাবাটি এলাকায় একটি পুকুর ছিল। কিন্তু ভাঙনের কারণে নদীর জল এসে পুকুরের মিষ্টি জল সব লবনাক্ত হয়ে গেছে। এই কষ্টের কারণে বাড়ির কাজ নষ্ট হয়ে গেলেও সংস্থার জল নিতে আসতে হয়। কারণ আমাদের জীবন বাচাতে হবে।
মুন্সিগঞ্জ গ্রামের এলাকার লক্ষী দাস জানান, এলাকায় একটি পুকুর রয়েছে। সুপেয় পানির জন্য পিসিএফের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বছর খানেক তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই বাড়ি থেকে ৩ কি.মি. দূরে জল আনতে যেতে হয়। সেখানেও ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে সুপেয় পুকুরের জল আনতে গেলে লাইনে দাড়াতে হয়। সকালে হেটে এক কলস জল আনতে,আর জল নিয়ে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়। এক কলস জলে দিন পার বলে মন্তব্য করেন লক্ষী দাস।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের অশোক রায় জানান,নোংরা জলে আমাদের গোসল করতে হয়। অনেকের গায়ে ঘাঁ-পাচড়া হয়েছে।
টেকসই বেড়িবাঁধই এসকল সমস্যার একমাত্র সমাধান উল্লেখ করে অশোক রায় জানান, নদীর লবনাক্ত জল যদি লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে, তবে লবনাক্ততা ধীরে-ধীরে কেটে যাবে।
বৃষ্টির পানি ছাড়া সুপেয় পানির আর কোন উৎস নেই উপকূলীয় এলাকায়। তাই বৃষ্টির পানিকে ধরে রাখতে বড় ধরণের জলাধার স্থাপনের পরামর্শ উপকূলীয় এলাকায় পানি সমস্যা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের।
এবিষয়ে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে বে-সরকারি সংস্থা লিডার্সের পরিচালক মোহন ম-ল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব,যেমন অনিয়মিত বৃষ্টিপাত অথবা সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি অথবা নদীভাঙন জনিত কারণে যে সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়, এ থেকে উত্তরণের পথ হলো,বৃষ্টির পানিটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ্এছাড়া বৃষ্টির পানি যেহেতু সমুদ্রে চলে যায়,তাই বড় ধরণের জলাধার তৈরির উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। তাহলে সুপেয় পানির সংকট কিছুটা কমবে। তবে যায় করা হোক না কেন,টেকসই বেড়িবাঁধ না করা হলে কোন কাজ হবেনা।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম জানান,যে সকল এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি পর্যাপ্ত নয় বা পানি পানযোগ্য নয়,সেসকল এলকায় প্রায় ৯ হাজার ওয়াটার হার্ভেস্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় ্এলকায় ১৬টি রিভার্স অসমোসিস বা আরও প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ হাজার গভীর ও ১১ হাজার অগভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৪২ হাজার পানির উৎস চলমান রয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় জেলা পরিষদের ১শ’ ৩২টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩টি পুকুর পুন:খনন করা হয়েছে। বাকীগুলোও প্রক্রিয়াধীন আছে। পুন:খননকৃত পুকুরগুলোর চারপাশ দিয়ে কাটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। যাতে ময়লা-আবর্জনা পুকুরে না পড়তে পারে। এছাড়া অন্যান্যপুকুরগুলোর ইজারা আর কাউকে দেওয়া হচ্ছেনা।

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..