বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ন , ই-পেপার
শিরোনামঃ
মারা গেছেন হিরো আলমের বাবা, নিজবাড়িতে জানাজা ফেসবুকে পুরোনো ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ দেখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড, ইউএনও লাঞ্ছিত গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বৃদ্ধের মৃ’ত্যু সিংড়ায় পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে সর্বস্বান্ত মালেকের পরিবার বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায়, ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, দেশবাসীকে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা প্রধান উপদেষ্টার ধর্মপাশায় ডোবার পানিতে ডুবে দুইজন শিশুর মৃত্যু পাট চাষে সহযোগিতা করবে জাজিরা উপজেলার কৃষি অফিসার,ওমর ফারুক খাওয়ার পানির সংকট সুবর্ণচরে , খাওয়ার পানি না পাওয়ায় দিশেহারা জনগন সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে হবে এইচএসসি পাস

ফেসবুকে পুরোনো ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ দেখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড, ইউএনও লাঞ্ছিত

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাঁরা মঞ্চ থেকে শিল্পদের নামিয়ে দিয়ে উপস্থাপককে মারধর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) অন্য অতিথিদের লাঞ্ছিত করেন। এতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়।

আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা মুক্তমঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দুই বছর আগে বর্ষবরণ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা একটি ব্যানার এবারের ব্যানার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সেই ব্যানার দেখে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে গিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালান।

উপজেলা প্রশাসন ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালে ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’-এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিলেন।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে হঠাৎ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন ওরফে কাইয়ুম, কামাল হোসেন তালুকদারসহ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা ইউএনওকে তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় ইউএনও কারণ জানতে চাইলে হামলাকারীরা প্রশ্ন করেন, মঞ্চের ব্যানারে স্থান হিসেবে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা হয়েছে কেন-এ কথা বলে যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, এ সময় ইউএনওসহ কর্মকর্তারা বাধা দিলে তাঁরা অতিথি ও আয়োজকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে এক নেতা উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে গালমন্দসহ ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীদের ইউএনও বলেন, ‘ব্যানারে তো কোনো বঙ্গবন্ধু চত্বর লেখা নেই।’ তখন নূর ফরিদ আবারও বলেন, ‘না, ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেসবুকেও ব্যানারের ছবি পোস্ট আছে। আমার ফোনেও এই ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনই বন্ধ করতে হবে।’ বিশৃঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায়, ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ১৪৩০ সালের।

আটপাড়ার ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, ‘উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম (মোদাচ্ছের হোসেন), কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানের মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকে ও অন্য কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘যখন ঘটনাটি ঘটেছে, তখন আমি উপস্থিত ছিলাম না। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান বলেন, ‘আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার মেসেঞ্জারে একটি ব্যানারের ছবি দেন। ওই ব্যানারে বঙ্গবন্ধু চত্বর লেখা ছিল। ফেসবুকেও একজনের এমন একটি পোস্ট দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন, কাইয়ুম, সদস্য মাসুক, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বলসহ কয়েকজন ব্যানার নামিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন, ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই।’

নূর ফরিদ খান বলেন, ‘আমরা যে ব্যানার ফেসবুকে দেখেছি, সেটি দুই বছর আগের। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানের ব্যানারটি নামানোর আগে ভালোভাবে দেখার দরকার ছিল। এ জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা।’

নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ‘আটপাড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..