রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সিংড়ায় ভোক্তা-অধিকারের অভিযানে তিন প্রতিষ্ঠান কে জরিমানা  সাতক্ষীরার তালায় ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত আহত ১১   বাগেরহাটের রামপালে লায়ন ড.শেখ ফরিদুল ইসলামের উদ্যোগে চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স সংযোজন ৫০০ রোগী বাছাই লোহাগড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী কে এম ফয়জুল হক রোমের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ  নড়াইলে চিত্রা নদী থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে দাঁড়িয়ে থাকা পিকাপ ভ্যান এর পেছনে ট্রাকের ধাক্কায় নি*হত ১ জোবিঅ সোনারগাঁও এর উদ্যোগে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কাজ চলমান । বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে মোংলা থানার ওসি (তদন্ত) ক্লোজড বাগেরহাটের রামপাল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে আলী সরদার নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার লোহাগড়ায় বিয়ের ৫ মাস না পেরোতেই দূর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

চালক-হেলপারদের ইচ্ছেমতো চলছে চট্টগ্রামের গণপরিবহন

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

কলেজের পাঠ চুকিয়ে বন্দর নগরীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি শুরু করেছেন ইয়াছিন। সোমবার (১৪ জুন) নগরীর হামজারবাগের বাসা থেকে পাঁচলাইশ মোড়ের উদ্দেশে বের হয়েছেন। দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। অথচ এই পথটুকু যেতে দু’বার গাড়ি বদলাতে হয়েছে তার। প্রতিবার গাড়িতে উঠেই গুনতে হয়েছে ১০ টাকা করে। যাওয়া-আসায় মোট দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া বাবদ তার খরচ হয়েছে ৪০ টাকা। এই দূরত্বে যাওয়া-আসায় আগে খরচ হতো ২০ টাকা।

হামজারবাগ মোড়ে তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। ইয়াছিন বলেন, ‘অল্প বেতনে চাকরি শুরু করেছি। ওঠানামা ১০ টাকার নামে পরিবহনগুলোর এই নতুন জুলুমে প্রতিদিন ভাড়া গুনতেই অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। আজকে বাসা থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের দূরত্বে পাঁচলাইশ মোড়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে একটি গাড়িতে করে মুরাদপুরে, সেখানে নেমে রাস্তা পার হয়ে অন্য একটিতে পাঁচলাইশ মোড়ে। সব মিলিয়ে যাওয়া-আসায় চারটি গাড়িতে চড়ে ৪০ টাকা খরচ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা ছিল। আর এই পথে যাওয়া-আসায় খরচ হতো ২০ টাকা। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ, আর পরিবহনগুলো নিচ্ছে দ্বিগুণ। পাঁচ টাকার ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়লেও হতো আট টাকা, অথচ এরা গাড়িতে উঠলেই নিয়ে নিচ্ছে ১০ টাকা।’

৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ নানা শর্ত থাকলেও তা মানা হয় না অভিযোগ করে এই তরুণ বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। গাড়িগুলোতে যাত্রীও থাকে পরিপূর্ণ। প্রতিবাদ করলেই চালক-শ্রমিকরা জোর করে নামিয়ে দেন। এভাবে জুলুম করলে আমরা যাব কোথায়?’

শুধু ইয়াছিন একাই নন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাস স্টপেজে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীতে যে কোনো ধরনের গণপরিবহনে উঠলেই গুনতে হয় ১০ টাকা। দূরত্ব যতই কম হোক, এর কম নিতে চান না পরিবহন শ্রমিকরা। স্বল্প দূরত্বে পরিবহনগুলো আগে পাঁচ টাকা করে নিত। কিন্তু এখন ১০ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নেই। সরকার ৬০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বললেও পরিবহনগুলো ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ।

 

এ বিষয়ে মাহিন্দ্রাচালক ছমির উদ্দিন বলেন, ‘আগে ওঠানামা ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল। এখন ভাড়া বাড়ানোর পর সবাই ১০ টাকা নিচ্ছে, আমরাও নিচ্ছি। ১০ টাকার নিচে আসলে ভাড়া কেমনে নেব?’

গণপরিবহনে এভাবে ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওঠা-নামায় ১০ টাকার বিষয়টি আমরা দেখছি। বেশিরভাগ গাড়িচালক সরকারের বেশি ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত মানছেন, কিন্তু অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ বিষয়ে বিভিন্ন গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। সব গাড়িতে তো আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। যাত্রীরা যেখানেই অভিযোগ দিচ্ছেন আমরা সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি।’

চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু কুমার দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা করছি। কিন্তু দেখা যায়, আমরা অভিযান পরিচালনার সময় ঠিক থাকে, শেষ হলে আগের অবস্থায় ফিরে যায়। আবার কিছুক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা যে সড়কে অভিযান চালাই সেখানে গণপরিবহনই বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও সড়কে অনিয়ম বন্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

যাত্রীভর্তি গাড়িতে বেশি ভাড়া, বাগ্বিতণ্ডা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিলে গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গাড়ির অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। বিপরীতে ৬০ শতাংশ করে ভাড়া বেশি নেয়া যাবে। কিন্তু বিভিন্ন গণপরিবহনে একদিকে গাড়িভর্তি যাত্রী নেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বাড়তি। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি তিন চাকার মাহিন্দ্রা গাড়িতে বিআরটিএর স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী যাত্রী নেয়া যায় ছয় জন। অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে নেয়া যাবে তিন জন। কিন্তু গাড়িতে স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী নেয়া হয় ১০ জন। ভাড়া বাড়ানোর পরেও অবস্থাভেদে ছয় থেকে ১০ জন করে যাত্রী নিচ্ছেন গাড়িচালকরা। শুধু মাহিন্দ্রা নয়, সব গণপরিবহনেই এভাবে বেশি ভাড়া নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

 

যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও বেশি নেয়ার বিষয়ে গাড়িচালকদের সঙ্গে একা প্রতিবাদ করলে তাকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয়। আর সবাই প্রতিবাদ করলেই পুরো গাড়ি থামিয়ে দিয়ে চালকরা বলেন, ‘গাড়ি আর যাবে না।’

আদনান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল রোববার (১৩ জুন) ১০ নম্বর বাসে একটা গাড়িতে বহদ্দারহাট থেকে ওয়াসা মোড় যাচ্ছিলাম। ২ নম্বর গেট এলাকায় এসে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়টি আমি একা প্রতিবাদ করলে গাড়িচালক আমাকে বলেন, আপনার ভালো না লাগলে আপনি নেমে যান। আবার কিছুদূর যেতেই সবকটি সিট পূর্ণ করে দাঁড়িয়েও যাত্রী নিলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বন্ধ করে চালক বলেন, গাড়ি আর যাবে না। এভাবেই চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করেন।’

বিষয়টি জানতে চাইলে এক বাসচালক বলেন, ‘আমরা অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী নেই না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিজেরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে কেউ কেউ গাড়িতে উঠে যান। এখানে আমাদের করার কিছুই থাকে না।’

এ বিষয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব গণপরিবহনে যাত্রীও বেশি নেয়া হচ্ছে, আবার ভাড়াও বেশি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটি দেখবে কে? সরকার শুধু ভাড়া বাড়িয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। গণপরিবহনের কী অবস্থা তারা জানেন না? বিআরটিএ চেয়ারম্যান ভাড়া নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি কি কখনো গণপরিবহনে চড়েছেন? আর ট্রাফিক পুলিশ সড়কে মোটরসাইকেল এবং কার নিয়ে ব্যস্ত। এসব গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা আদায় করেন তারা। গণপরিবহনের দিকে তাদের নজর নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুমাস আগে ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে গাড়িচালক এক যাত্রীকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে তার একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা সরকারকে বারবার বলেছি, ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যাত্রীদের জন্য কষ্টদায়ক। এমনিতে দেশের সবকিছু স্বাভাবিক। শুধু গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে ভাড়াটা বাড়ানো হয়েছে। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে গণপরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত দেয়া হোক।’

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
এদিকে সরকার নির্দেশনা দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি চট্টগ্রামের গণপরিবহনে উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। এ নির্দেশনাই যেন ‘ভুলে গেছেন’ যাত্রী, চালক, শ্রমিক সবাই। নগরের বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে দেখা গেছে, প্রায় গাড়িতেই চালক ও হেলপারদের মুখে নেই মাস্ক। আবার যাত্রীদেরও অর্ধেকের বেশি মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী নন। গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে রাখার কথা বলা হলেও বিষয়টি মানছেন না বেশিরভাগ চালক।’

 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারঘোষিত লকডাউনের শুরুতে জেলা প্রশাসনের একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন্তু দিনে দিনে রাস্তায় গণপরিবহন বেড়েছে, একই সময়ে জেলা প্রশাসনের অভিযানও কমেছে। একপর্যায়ে এসে প্রায়ই থমকে গেছে অভিযান। এসবের কারণে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি একপ্রকার সবাই ভুলে গেছেন।

থুতনিতে মাস্ক ঝুলানো যাত্রী নাঈম উদ্দিন বলেন, ‘গণপরিবহনে চলাফেরা করছি। দেখছেন না গাড়িতে কিভাবে যাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এখানে দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখব? আবার অর্ধেকের বেশি যাত্রী, গাড়িচালক ও হেলপার কেউ মাস্ক পরেনি? আমি পরে লাভ কী? তাই গরমের কারণে মাস্কটা একটু থুতনিতে নামিয়ে দিছি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটও অভিযান পরিচালনা করছেন।’

বেশ কিছুদিন ধরে গণপরিবহনে অভিযান বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এটি শিডিউল করা আছে। শিডিউলে হয়তো গণপরিবহন ছিল না। বিষয়টি আমরা দেখছি।’

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..