পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার উদ্যোগে ৩১ আগষ্ট মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বরে “অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবিতে এবং চেংগী-সাঙ্গু ও কর্ণফুলী নদীসহ সকল নদী দখল-দূষণমুক্ত ও নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের দাবিতে ছাত্র-যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে”।
সমাবেশে গ্রীন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক জনাব আলমগীর কবির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, সরকার আমাদের দাবী মেনে নিলেও বাস্তবায়নে সে রূপ সাফল্য আসেনি। সরকারের অনেক নীতি পরিবেশবান্ধব এটা আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু জনগণ সেই সুবিধা পাচ্ছে না। একচেটিয়াভাবে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। যা আগে ২৪,০০০ হাজার কি.মি.নৌপথ ছিল এখন তা ৩ থেকে ৫ কি.মিটারে ঠেকেছে। বর্তমান সরকার কতটুকু নদী উদ্ধার করে তা এই পরিসংখ্যান থেকে তুলনা করে বুঝা যাবে। নদী দূষণ ভয়াবহ এবং ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ও কমে গেছে। এমতাবস্থায় ভূপৃষ্ঠের পানি যথোপযুক্ত সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সাচিনু মারমা বলেন, আমরা সারা বছর নদী রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। যারা নদী দখলের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের এই জঘণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে দূর্বার অন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশ প্রধানতঃ গঙ্গা-বহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর পলি মাটি দিয়ে গঠিত একটি বদ্বীপ ভূমি। নদী শুধু আমাদের মাটি ও পরিবেশের শতকরা আশি ভাগের জন্মদাত্রীই নয়, অনাদিকাল থেকেই প্রতিমুহুর্তে নদীর পানি দ্বারাই আমাদের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি, জীবন ও মানুষ সিঞ্চিত হচ্ছে। একাদশ শতাব্দিতে বাংলাদেশে নদীর সংখ্য ছিল প্রায় দেড় হাজার। নদী গুলোছিল প্রশস্ত, গভীর ও পানিতে টইটুম্বুর, বর্ষাকালে প্রমত্তা। সারা বছর নাব্যতা থাকে তেমন নদীর সংখ্যা আজ সর্ব সাকুল্যে ২৩০ টি। গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও বরাক-মেঘনানদীএবংতাদেরউপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য সীমান্ত অতিক্রান্ত নদী মিলেই সার াবাংলাদেশের মুলনদী নেটওয়ার্ক গঠিত। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা আজ ব্যাপক নদী বিপর্যয়ের শিকার। বর্তমান নদী সমূহের মধ্যে ১৭টি নদী একেবারেই নদীর চরিত্র হারিয়ে, শুকিয়ে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে রয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ ১০০ টির সাংবাৎসরিক নৌ-চলাচলের উপযোগী প্রশস্ততা ও পানির গভীরতা রয়েছে। ১৯৭১ সনের তুলনায় আমাদের শীত কালের মোট নদী পথ প্রায় ৯০% হ্রাস পেয়েছে।
পানি প্রত্যাহার ইত্যাদি ছাড়াও ৫৭টি সীমান্ত অতিক্রান্ত নদীর প্রতিটির উপর বিশেষতঃ ভারত বা চীনের স্থাপনা, বাঁধ, জল বিদ্যূত প্রকল্প, পানি প্রত্যাহার, পাহাড় কাটা, গাছ কাটার ফলে এসব নদীর নাব্যতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, অনেক গুলো শুকিয়ে মৃতপ্রায়। নদীর পাড় ও পানির যে কোনটির অবক্ষয়ই শেষ পর্যন্ত নদীর পানিকে দূষিত করে, নদী ভরাট হয়।শিল্প-কারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, নৌ-যান নিঃসৃত ময়লা, বর্জ্য ও তেল; বেআইনী দীর্ঘ স্থায়ী জৈব দূষক পদার্থ, শহুরে বর্জ্য, পলিথিন ব্যাগ, প্ল¬াষ্টিক দ্রব্যাদি; দখলদারদের বর্জ্য, হাসপাতালবর্জ্য, মানুষ ও পশু-পাখিরমল-মূত্র, মৃতদেহ; নদী ভাঙ্গনের মাটি, গাছ-গাছালিরপাতা ও কচুরি পানা, ভাঙ্গা নৌযান, মাছধরা ও নির্মাণ সামগ্রী কারখানার নিঃসৃত গরম পানি ইত্যাদি নদী দূষণের প্রধান কারণ।নদী রক্ষায় অব্যাহত আন্দোলন চলবে। এই আন্দোলনে সারাদেশের যুব সমাজ সম্পৃক্ত হচ্ছে। নদী রক্ষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সকল নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ নিশ্চিত করতেই হবে এবং অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ ও চেংগী-সাঙ্গু ও কর্ণফুলী নদীসহ সকল নদী দখল-দূষণমুক্ত ও নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে।