ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে পর্যবেক্ষক নীতিমালা তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে বড় পরিবর্তন এসেছে শিক্ষাগত যোগ্যতায়—এবার পর্যবেক্ষক হতে হলে ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে। ফলে বাতিল হয়ে যাচ্ছে ২০২৩ সালের পুরনো নীতিমালা ও তাতে দেওয়া সংস্থাগুলোর নিবন্ধন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নতুন নীতিমালার আলোকে পুনরায় আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচিত সংস্থাগুলোকে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হবে।
নতুন নীতিমালার খসড়া প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ যিনি করবেন, তার ন্যূনতম একাডেমিক যোগ্যতা থাকা দরকার। এটা কাউকে ছোট করার জন্য নয়, বরং বোঝাপড়ার মান বাড়ানোর জন্য।”
তিনি জানান, আগের নীতিমালার মতোই অন্যান্য নিয়ম থাকবে, তবে পর্যবেক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি থেকে বাড়িয়ে এইচএসসি করা হচ্ছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তাদের প্রস্তাব ইতোমধ্যে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ নয়টি বিষয়ের ওপর ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।
আগামী এপ্রিলের শুরুতেই সরকারের কাছে ইসির মতামতসহ প্রস্তাব পাঠানো হবে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০টি সংস্থার ৫১৭ জন ও স্থানীয় ৮৪টি সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন পর্যবেক্ষক অনুমোদন পেয়েছিলেন। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৮১টি সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন, বিদেশি ৫৯৩ জন।
নতুন নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানোর উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “এইচএসসি নয়, বরং ন্যূনতম স্নাতক করা হলে আরও ভালো হতো। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পর্যবেক্ষক ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা কঠিন।”
তিনি বলেন, “অনেক মৌসুমী সংস্থা নির্বাচন ঘিরে চলে আসে, যাদের উদ্দেশ্য সবসময় স্বচ্ছ নয়। তাই ভালো প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কঠোর যাচাই জরুরি।”
ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খানও বলেন, “স্নাতক যোগ্যতা হলে ভালো হতো, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ। তাদের ভূমিকা হবে পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করা, মন্তব্য নয়।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসছে না। আগের নিয়মেই চলবে তাদের কার্যক্রম।
নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক পক্ষপাতহীনতা, স্বার্থসংঘাত ও ভুঁইফোড় সংস্থার বিষয়গুলো এবার কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাতে প্রকৃত ও দক্ষ সংস্থাগুলোই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্ত হতে পারে।