ভিয়েতনামের হোচিমিন নদীর ন্যায় বুড়িগঙ্গাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখক মজনু সরকারের ভাবনা।
ভোলায় যাওয়ার পথে যতোবারই সদরঘাটে আসি ততোবারই বুড়িগঙ্গার ঝুলে পড়া রুপ-লাবণ্য আর নগ্ন শরীর দেখে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়, তখন বড্ড মনে পড়ে আমার দেখা ভিয়েতনামের হো চি মিন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সায়গন নদীর কথা ।
ছোট একটি নদী, আহামরি কোন রুপ-লাবণ্য নেই, নেই কোন উপচে পড়া যৌবনের ঢেউ। অনেকটাই নিরবে হো চি মিন শহরের মধ্যে দিয়ে কুল কুল করে বয়ে গেছে। এই শহরে কিছু সভ্য মানুষের (নৌ-বাহিনীর তত্ত্ববধায়নে পরিচালিত ও সাধারন মানুষের সচেতনতায়) ভালোবাসা সিক্ত হয়ে আজ সেই ছোট নদীটি ভিয়েতনামের সবচাইতে ব্যয়বহুল ও আকষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে, যেখান দেশি-বিদেশি পযটকরা যাই শুধু মন পবনের নায়ে (স্থানীয় ভাষায় যে নৌকাকে রিভার ক্রজ বলে) চড়ে কিছু সময়ের জন্য (সন্ধা ৬.৩০ টা থেকে রাত ৯.৩০টা পর্যন্ত) সায়গনের রুপ-সাগরে ডুব দিতে, স্বচ্ছ জলে গা ভাসিয়ে দিতে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে মন ভাসিয়ে দিতে, ঐতিহ্যবাহী ভিয়েতনামী সঙ্গীতের মুর্ছনা ও অপসরীদের নাচে হারিয়ে যেতে, ভিয়েতনামী গালা ডিনারে নাক ডুবিয়ে দিতে আর রঙ-বেরঙের পানীয়তে গলা ভেজাতে ভেজাতে নদীর দুপাশে থাকা বর্ণিল শহরের আলোকময় সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
বিপরীতে আমাদের বুড়িগঙ্গা!
কিছু অসভ্য ও নষ্ট শিল্পপতিদের নিয়মিত ধর্ষণে ধর্ষিত হতে হতে তার যৌবনের ভাটা পড়ছে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে, বুকের স্বচ্চ জল কালো হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে এবং পচে গেছে। এমনভাবে পচে গেছে যে, তার জলে অক্সিজেনের অভাবে মাছেরা পর্যন্ত বাস করতে পারছে না, শরীর থেকে রীতিমতো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যে দুর্গন্ধে আশেপাশের জন-জীবন উষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে, অথচ প্রবল ইচ্ছে শক্তির কিছু মানুষ এবং সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাই পারে এই নদীটিকে সংস্কার করে সায়গন নদীর মতো করতে, পারে সায়গনের মতো পর্যটকঘণ ক্লাস্টারে পরিনত করতে। সেই রুপ-লাবণ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুযোগ-সুবিধা সবই আছে তার। নেই শুধু সরকারি-বেসরকারি সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা এবং কিছু মানুষের সৎ ইচ্ছে।
অথচ চারোদিকে মৌ মৌ দুর্গন্ধময় এই জায়গা আর নোংরা পরিবেশের মধ্যেও আজ সুগন্ধের আলো ছড়াচ্ছে নদীর কোলঘেষে জেগে উঠা সরকারী সদরঘাট লঞ্চ ট্রার্মিনালের তৃতীয় তলার ছাদে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা রিভারভিউ রেস্টুরেন্ট (Buriganga Riverview Restaurant), যেখান গেলে আপনি বুড়িগঙ্গার রুপ-লাবণ্য, নদীকেন্দ্রিক রঙ-বেরঙের দক্ষিণবঙ্গগামী লঞ্চের নোঙর ও ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য, ব্যস্ত নগরী ও নদীকেন্দ্রীক মানুষের জীবন আর আলোকময় নদীর দুকুল ছাপিয়ে উঠা বিল্ডিং এর রাতের আলোক সজ্জা, গোধূলি লগ্নে সুর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য, ছবি প্রেমিকদের নানা পোজের ছবি উঠানোর নানা অনুসঙ্গের আলোকময় স্বগীয় পরিবেশ আর খাবার বিলাসীদের জন্য রয়েছে নানা দেশি-বিদেশি খাবারের হরেক রকম আইটেম।
আমার বিশ্বাস বুড়িগঙ্গার তীরবতী এই রেস্টুরেন্ট আপনাকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিবে, এখানে আসলে আপনার মনে হবে না এটি বুড়িগঙ্গার তীরে জেগে উঠা কোন এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট, মনে হবে এটি ইউরোপের কোন এক শহরের কোন এক বিখ্যাত নদীরপাড়ে অথবা ভিয়েতনামের সায়গন নদীর তীরে স্থাপিত কোন এক রেস্টুরেন্ট এবং আপনি সেইখানে বসে দেশি-বিদেশি খাবার খাচ্ছেন আর নদীর অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। সাথে এটাও দেখতে পাবেন ইচ্ছে থাকলে আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই দুর্গন্ধময় জায়গাও সুগন্ধের সুবাস ছড়ানো এবং অন্ধকারে মধ্যেও আলো ছড়ানো সম্ভব।
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..