রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ অপরাহ্ন , ই-পেপার
শিরোনামঃ
নেত্রকোণার হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে উল্লাপাড়ায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন। নেত্রকোণায় জমি বিক্রি কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৯ জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করার সুপারিশ ফয়জুল করীমকে বিসিসির মেয়র ঘোষণা করতে,বরিশাল আদালতে মামলা রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড, ৫ শিক্ষককে জরিমানা পহেলা মে থেকে সারা দেশে ডিম ও মুরগির খামার বন্ধ রাখার ঘোষণা নড়াইলে সৌদি প্রবাসী আকরাম শেখ হত্যাকাণ্ডের জের ২১ বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট মোহনগঞ্জে ইমামের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন রাঙ্গাবালীতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে

নেত্রকোণার হাওরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

নেত্রকোণার ছোট বড় ১৩৪টি হাওরে ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষক। নতুন প্রজাতির ধান ও অগ্রিম রোপণের ফলে গত বছরের চেয়ে এক সপ্তাহ আগেই ধান পেকে যাওয়ায় কাটতে পারছেন হাওরের কৃষকেরা। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাকে সামনে রেখে করা হচ্ছে তড়িঘড়ি। ভালো ফলন হওয়ায় উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

রবিবার (২০ এপ্রিল) জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর, খালিয়াজুরি উপজেলার জগ্ননাথপুর হাওর মদনের গোবিন্দশ্রী হাওরে গিয়ে দেখা গেছে ধান কাটা নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা।

সনাতনী পদ্ধতির বাইরে ধান কাটাতেও এসেছে আধুনিকতা। ধান কাটা শ্রমিকের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। চলতি বোরো মৌসুমে ফলনও হয়েছে বাম্পার। এতে কৃষকের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলা এ জেলার হাওর অধ্যুষিত এলাকা।

বোরো ধানের ভাণ্ডার হিসেবে সারাদেশে পরিচিত নেত্রকোণা জেলা। এ জেলা উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদনকারী জেলা। এর মধ্যে হাওরের ধান জেলার মোট উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জেলার মোট আবাদি জমির প্রায় ২৫ শতাংশই হাওর। এই হাওরের এক ফসলি জমিগুলোর ফসলের ওপর নির্ভর করে জেলার ৩০ শতাংশ মানুষের জীবন জীবিকা। ধানকে ঘিরেই চাঙা হয় হাওরের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর জেলায় মোট বোরো আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে বোরো আবাদের পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমি। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন। তবে ভালো ফলন হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।

জেলার মোট বিতরণ করা ১০১৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মধ্যে ৭৩৬টি মেশিন ব্যবহার হচ্ছে, এছাড়াও অগ্রিম ধান কাটা শুরু হওয়ায় জেলার বাইরে থেকে দুই শতাধিক হারভেস্টার মেশিন এসেছে ধান কাটতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর মাত্র ১০ দিনে হাওরের সব ধান কাটা সম্ভব।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আপাতত বড় রকমের ঝড়-বৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বন্যা পরিস্থিতির কোনো লক্ষণ নেই। ফলে অনায়াসে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারবেন। ছাড়াবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

মোহনগঞ্জ উপজেলার দিঙ্গাপোতা হাওরে পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা। এ এলাকার কৃষক আব্দুল হাসিম বলেন, এ বছরের আবহাওয়ার কোনো সমস্যা না থাকায় ফসলের উৎপাদন বেশি মনে হচ্ছে। এখন দাম পেলেই হয়। তাছাড়া নতুন জাত ও ধানে রোগ বালাই তেমন নাই।

মোহনগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাকুর সাদি বলেন, আমরা এ বছর কৃষকদেরকে নতুন ধানের জাত যেমন ব্রি ৮৮/৮৯/৯২/৯৬/১০২ এবং বিনা ২৫ ইত্যাদি হাইব্রিড ধানের আবাদের জন্য বলেছি, এই জাতগুলোতে পোকা মাকড়ে আক্রমণ কম করে এবং উৎপাদনও বেশি হয়। ব্রি ২৯ এর থেকে তাড়াতাড়ি পাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। কৃষকরা আমাদের কথা শুনেছে, আশা করি ভালো রেজাল্ট পাব। মোহনগঞ্জ হাওরের ধান ৯৫ ভাগ কাটা হয়ে গেছে।

খালিয়াজুরি উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজিব সরকার বলেন, এই বছর ধান ভালো হয়েছে। আশা করি কাটাপ্রতি ৭/৮ মন ধান পাব।

যদি ধান ঘরে তুলতে পারি তবে লাভবান হতে পারব। আর ১০ দিন সময় পেলে ধান সম্পূর্ণ ঘরে তোলা সম্ভব। তবে এখন বৃষ্টি বাদল না হইলেই হয়।

উপজেলার ছায়ার হাওরের পাশের গ্রাম মুসলিম পুরের কৃষক নাদিম মিয়া বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় মাড়াই করা ধান বাড়িতে না নিয়ে ক্ষেতের পাশের মাঠ থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছি।

খালিয়াজুরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. দিলুয়ার হোসেন বলেন, আমরা কৃষকদেরকে তাড়াতাড়ি ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি, পাকাধান যাতে মাঠে পড়ে না থাকে, বৃষ্টি বাদল আসার আগেই যাতে আমরা ধান ঘরে তুলতে পারি। ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলেই ধান কেটে ফেলতে হবে। তাছাড়া এখন তো আর কেউ কাস্তে হাতে ধান কাটে না। প্রচুর হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারয়ার জাহান বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যই হাওরের ফসল রক্ষার জন্য বিশেষ করে খালিয়াজুরিতে মোট ১৩১টি পিআইসির কাজ শেষ করে দিয়েছি। আবহাওয়ার অবস্থাও ভালো। আগাম বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও আমরা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যই কৃষক ফসল ঘরে তুলবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, গত বছর ১২ লাখ ২৬ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল যেখানে আমাদের এবারের টার্গেট ১২ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। আজ রোববার পর্যন্ত জেলার মোট ৪২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এরমধ্যে হাওরের নিচু এলাকার ধান অনেকাংশই কাটা হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি কাটা হয়েছে মোহনগঞ্জের হাওরে। খালিয়াজুরী পুরোদমে ধান কাটা চলছে এখনও। আর ১০ দিনের মধ্যে পুরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এরমধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাত বা বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ধানের কোনো সমস্যা হবে না। আগাম ও উন্নত জাতের ধান চাষ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান কেটে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..