নেত্রকোণার দুর্গাপুরে জমি নিয়ে বিরোধে দুইজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় মামলা হলে অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তবে নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী পক্ষকে ফাঁসাতে আসামির কিশোরী মেয়েকে অপহরণের নাটক সাজায় হামলাকারীরা। পরে পুলিশের তদন্তে তা ধরা পড়ে।
ভুক্তভোগীদের চাপে ফেলতে অপহরণ নাটক সাজানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের বড়বাট্টা গ্রামে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাবাসী, মামলার অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বড়বাট্টা গ্রামের বজলুর রহমান ও এ এস এম ইলিয়াস রহমানের পরিবারের সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছেে। ইলিয়াস রহমানের পরিবারের দখলে থাকা জমিটি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছিল বজলুর রহমান ও তার স্বজনরা। জমিটিতে বরাবরের মতো চারপাশে সিমেন্টের পিলার বসিয়ে বাউন্ডারি দিয়ে এতে সবজি চাষের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। গত ১৭ জানুয়ারি ওই জমিতে গিয়ে পিলার ভেঙে ফেলে দিয়ে দখলে করে নেন বজলুর রহমান, তার ছেলে কাইয়ুম খান, শাহান ও অন্যান্যরা। এতে বাধা দেন ইলিয়াসের ভাতিজা আবু ইসহাক ও জাফর আহসান। ক্ষিপ্ত হয়ে শাহান ও কাইয়ুমসহ তাদের লোকজন রামদা দিয়ে কুপিয়ে আবু ইসহাকের পা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন শাহান। জাফরকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসাপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে ঘটনার দিনই এ এস এম ইলিয়াস রহমান বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের বজলুর রহমান, কাইয়ুম ও শাহানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় কাইয়ুম খানকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
তবে আসামি পক্ষের লোকজন ভুক্তভোগীদের ফাঁসাতে কূটকৌশল অবলম্বন করেন। ঘটনার ৩-৪ দিন পর তারা গ্রেপ্তার কাইয়ুম খানের মাদরাসা পড়ুয়া কিশোরী মেয়েকে অপহরণের নাটক সাজান। এলাকায় প্রচার চালান ইলিয়াস ও তার লোকজন ওই কিশোরীকে অপহরণ করে মারধর করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বিচার দাবি করেন। পরে থানায় মামলা করতে গেলে বাধে বিপত্তি। থানা পুলিশ তদন্ত করে অপহরণের ঘটনাটি সাজানো জানতে পেরে মামলা নেয়নি।
সরেজমিনে বড়বাট্টা গ্রামে গেলে এ বিষয়ে আব্দুল হাই জজমিয়া, খোকন মিয়া, সেন্টু মিয়া, রায়হান মিয়া, মতি মিয়া ও আ. কুদ্দুছসহ ২০-২৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, জমি দখলে বাধা দেওয়ায় ইসহাকের পায়ে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন প্রতিপক্ষের কাইয়ুম, শাহান ও তাদের লোকজন। ইসহাকের পা কেটে ফেলতে হবে। জাফরও গুরুতর আহত। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নিজেদের অপরাধ ঢাকতেই কাইয়ুমের মেয়েকে অপহরণের নাটক সাজানো হয়েছে। কোনো অপহরণ হয়নি, এটি পুরোপুরি মিথ্যা।
মামলার বাদী এ এস এম ইলিয়াস রহমান বলেন, আমাদের করা মামলা থেকে বাঁচতে আসামিপক্ষ অপহরণ নাটক সাজিয়েছে। এলাকাবাসীর কাছেই জিজ্ঞেস করেন তারাই প্রকৃত ঘটনা বলবে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বড়বাট্টা বাজারের পল্লী চিকিৎসক ডা. বিজন সরকার বলেন, ওই কিশোরীকে প্রথমে আমার চেম্বারে নিয়ে এসেছিল। কেউ একজন ঢিল মেরেছে, এতে হাতে সমান্য ব্যাথা পেয়েছে বলেছে। আমাকে ধরতে দেয়নি। দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে শাহানসহ অভিযুক্তদের কাউকে পাওয়া যায়নি। মামলার আসামি হওয়ায় তারা পলাতক রয়েছেন।
দুর্গাপুর থানার ওসি বাচ্চু মিয়া বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে ইসহাক ও জাফরকে গুরুতর জখম করার ঘটনায় শাহান, কাইয়ুমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। মামলায় কাইয়ুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। ইসহাকের পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। হয়তো পা কেটে ফেকতে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ওই হামলার ঘটনার কয়দিন পর আসামিদের একজনের কিশোরী মেয়েকে অপহরণের বিষয়ে একটা মামলা করতে চেয়েছিল। তদন্তে গিয়ে জানা গেছে অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা। পরে আর মামলা নেওয়া হয়নি। মিথ্যা মামলায় কেউ আসামি হোক এটা চাই না।