নড়াইলের লোহাগড়ায় হানাদার মুক্তদিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) লোহাগড়া হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচীর মধ্যে পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বর্ণাঢ্য র্যালি, শহীদ হাবিবুর রহমান ও মোস্তফা কামালের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিন সকাল ১১টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজগর আলী, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিকদার আঃ হান্নান রুনু।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নড়াইল জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এম কবির হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরিন জাহান, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দীন, পৌর মেয়র সৈয়দ মশিয়ূর রহমান, উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধাগণ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে লোহাগড়াকে হানাদার মুক্ত করে। জয় বাংলা, জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা জনপদ।
নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লোহাগড়ার উত্তরাঞ্চল হানাদার মুক্ত হয়। এরপর পাকহানাদার বাহিনী লোহাগড়া থানায় সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদীর কালনাঘাটে ৭ ডিসেম্বর রাতে বৈঠকে মিলিত হয়ে ৮ ডিসেম্বর গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী, মুজিববাহিনীর প্রধান শরীফ খসরুজ্জামান, আবুল হোসেন খোকন, গোলাম কবির, মফিজুল হক, দিদার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল তাজসহ ৪০-৫০ জনের একদল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ৮ ডিসেম্বর ভোরে পশ্চিম দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করেন। লোহাগড়া থানা আক্রমণের সময় সম্মুখ যুদ্ধে কোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল তাজ নিহত হন। নিহত হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানা চত্বরে কবর দেওয়া হয় এবং মোস্তফা কামাল তাজকে ইতনা স্কুল ও কলেজ চত্বরে কবর দেওয়া হয়। লোহাগড়া থানা আক্রমণের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ৪২ জন পাকহানাদার সদস্যকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। ৮ ডিসেম্বর সকালে লোহাগড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে থাকে। লোহাগড়া হানাদারমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে উল্লাসিত জনতা পথে-প্রান্তরে নেমে আসেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, লোহাগড়া উপজেলা সাবেক কমান্ডার আঃ হামিদ জানান, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যায় লোহাগড়া উপজেলা দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। তবে স্বাধীনতার এত বছরেও লোহাগড়ায় নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। চিহিৃত হয়নি লোহাগড়ার ইতনা গ্রামের ৩৯জন শহীদের কবরও। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, গণকবরগুলো চিহিৃত করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।