বুয়েটছাত্র ফারদিনকে খুন নয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান তিনি। এদিকে, ফারদিনের আত্মহত্যার বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছে ডিবি।
ডিবি জানায়, ভুক্তভোগী ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিলেন। সবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারতেন না। তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। প্রথম সেমিস্টারে ৩.১৫ তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ পয়েন্ট হয়, যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতো না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল ফারদিনের, যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। নিজে টিউশন করতেন ৪টা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়ালেখা করাতেন। তারপরও বাড়ি থেকে বলা হয় হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল যেটা ভুক্তভোগী মানতে পারে নাই।
ডিবি আরও জানায়, ফারদিন নূর পরশের ২টা নাম্বারে বি-পার্টি ছিল সর্বমোট ৫২২টি। ওই দিন রাতে সে যেখানে যেখানে ঘুরেছে তার সেলে কোনো বি-পার্টি সার্চ করে একই অবস্থানে পাওয়া যায়নি। সে যেভাবে উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, মানসিকভাবে ডিস্টার্বড ছিল। কারো সাথে ওই দিন রাতে দেখা করে নাই। সে বাবুবাজার ব্রিজ টার্গেট করে। ১০টা ৫৩ মিনিটে ও ১১টা ৯ মিনিটের সময় বাবুবাজার ব্রিজ অনেক ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত সে ওখান থেকে পিছপা হয়। তারপর নিজের সাথে নিজে কথা বলে সময় নেয়। পরে আবার তার নিজের বাসা অতিক্রম করে ডেমরা সেতুতে যায়। গ্রামীণ নাম্বারের আইপিডিআরে তার অবস্থান সেতুর ওপর অনুমান করা হয়। লেগুনা ড্রাইভার তাকে যেখান নামিয়েছিল বলেছে তার সাথে মিল পাওয়া যায়। এটাতে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বশেষ সেতুর ঠিক মাঝখানে তার অবস্থান ছিল।
এ রকম আত্মহত্যার উদাহরণ রয়েছে জানিয়ে ডিবি জানায়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যার আগে সারারাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছিল। আমাদের ভিকটিমও এ রকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। বান্ধবী বুশরাকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং কারো সাথে দেখা করে নাই। ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সাথে মেসেঞ্জারে এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ময়নাতদন্তের বিষয় উল্লেখ করে ডিবি জানায়, যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন তাদের সাথে আমরা অনেক বার যোগাযোগ করি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসে নাই। আসলে পূণাঙ্গ মতামত তারা দিবেন। প্রাথমিকভাবে যেটা দিয়েছে সেখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে। কিন্তু খুবই সামান্য আঘাত সেটা। এই আঘাতে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হতে পারে মর্মে জানানো হয়। যদিও মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেছেন মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসতো। সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। ফারদিন সাঁতার জানতো না বলেও জানায় ডিবি।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন বুয়েট ছাত্র ফারদিন। পরদিন ৫ নভেম্বর তার বাবা রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ৭ নভেম্বর তার মরদেহ শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করা হয়।