গত কয়েক দিনের টানাভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নদীতে এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাউবো বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ১১টার পর থেকে বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি। বৃহস্পতিবার (১৬ই জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমা বরাবর অবস্থান করছিল। বারোটা পরবর্তী সময় থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাউবো সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি জলকপাট (৪৪টি গেট) খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ডিমলা উপজেলার টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের মসজিদপাড়া, টাবুর চর, পূর্ব খড়িবাড়ি, বাঘের চর, জিঞ্জির পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেলির বাজার (মসজিদপাড়া) গ্রামের তিস্তা নদীর তীরবর্তী স্বপন বাঁধ মেরামত না করায়, ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকের বাড়িঘরে হাঁটু ও কোমর পানি উঠায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি এসব বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার ফসল ও রাস্তা-ঘাট।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছেন, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় স্বপন বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে রাতে আকস্মিক পানি উঠে বাড়িঘর প্লাবিত হয়। এই মুহূর্তে ভাঙ্গা অংশ মেরামত করা না গেলে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্বপন বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সবুজ ইসলাম জানান, গত বছর বন্যায় আমাদের গ্রাম রক্ষা তিস্তা নদী সংলগ্ন স্বপন বাঁধটি ভেঙে যায়। বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধের ভাঙ্গা অংশ মেরামত করা হয়নি আজও। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি খুব বেশি না বাড়লেও উজানে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসায় তিস্তার পানি বেড়ে যায়। গ্রামের রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মসজিদ পাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সচিব আব্দুর রহমান বলেন, বালু দিয়ে ভরাট হয়ে তিস্তা নদীর তলদেশের গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে সামান্য পানিতেই তিস্তা নদীর পানি উপচে গিয়ে নদী পাড়ের গ্রামগুলো প্লাবিত করে। গত কাল থেকে তাদের বাড়িতে পানি উঠেছে, কিন্তু পানি নামছে না বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়া পরিবারগুলোর খোঁজখবর সার্বক্ষণিক রাখা হচ্ছে। যাঁরা ঝুঁকিতে রয়েছেন দ্রুত তাদের নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেওয়া হবে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা (প্রিন্স) জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছে। আজ রাতে আরো নদীর পানি বাড়তে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার কোন পূর্বাভাস নেই