মাগুরা জেলার দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার না করায় মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর থেকে পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের এবং লাহুড়িয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কের পুরাটায় খানাখন্দে ভরে গেছে। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০ গ্রামসহ আশপাশের লাখো মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
শুষ্ক মৌসুমে ধূলোময় হয়ে খানাখন্দে ভরা এই সড়কটি চলাচলে যেমন দূর্ভোগ। তেমনই বর্ষাকালেও বৃষ্টির পানি জমে সড়কটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ লাখো মানুষের বছরের সকল সময়ই দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়েনা।
মহম্মদপুর উপজেলার সাথে নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। যা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও জীবনের ঝৃঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন লাখো মানুষ। আবার ছোট-বড় যানবাহনে চলাচলের সময় প্রতিদিনই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।
এ ছাড়াও সমস্যায় পড়ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী। সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনো ব্যক্তি অসুস্থ্য হলে তাদেরকে উপজেলা সদরে বা জেলা হাসপাতালে নিতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পরিবহণ পাওয়া যায় না। পেলেও অতিরিক্ত অর্থ ও সময় দুটিই ব্যায় হয়। ভাঙাচোরা সড়কের ফলে সময় বেশী লাগায় রুগীর জীবনের ঝুঁকি এসে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হরেকৃষ্ণপুর থেকে উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এই সড়কের পুরাটায় কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা সড়কটি যেন কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে। এতে এই সড়কে একটি গাড়ী আরেকটিকে অতিক্রম করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এলাকাবাসী বলেন তাঁদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে নিতে হয়। কিন্তু এই ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ভ্যান বা নছিমন চালকেরা যেতে চান না। আবার গেলেও এর জন্য অতিরিক্ত পরিবহণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাঁদের। আর তাই দ্রুত এই সড়কটির সংস্কারের দাবী জানান তাঁরা।
এই রাস্তার ভ্যানচালকেরা বলেন, ভাঙা রাস্তার জন্য ভ্যানে বেশী মাল নেয়া যায় না। এছাড়া ভ্যানও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু কি করবো পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এই ভাঙাচোরা রাস্তায় ভ্যান চালাতে হচ্ছে।
চরঝামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম রেজাইল করিম চুন্নু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র এই সড়কটি প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর সংস্কার না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোয়াতে হচ্ছে এলাকার কৃষক, ভ্যানচালক, রুগীসহ সাধারণ পথচারীদের। এছাড়াও এই এলাকায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ১৩ কিলোমিটার এই সড়কের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
শুষ্ক মৌসুমে ধূলোময় হয়ে খানাখন্দে ভরা এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে সড়কটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটির এই বেহাল অবস্থা। এতে এলাকার কৃষক, ভ্যান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণের বছরের সকল সময়ই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। সর্বসাধারণের কথা ভেবে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসাইন জানান, এই সড়কটি উপজেলা এলজিইডির না। তাই উপজেলা এলজিইডি কিছু করতে পারবে না। এটা জেলা হাইওয়ের।
হাইওয়ে রোড পরিদর্শক মো. জাকির মিয়া বলেন, উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটারের এই সড়কটি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ১৩ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। আশা করছি, অল্পদিনের মধ্যে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হবে।