বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা গ্রামের সৈয়দ আবু তাহেরের ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আলিফ ছিল সবার ছোট।
পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ফুলতলা এম এম কলেজের ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটের ভিতরে দাঁড়িয়েছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র আলিফ রোহান। কতিপয় দুর্বৃত্ত আকস্মিকভাবে তার বুকে ও পেটে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সহপাঠিরা তাকে উদ্ধার করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
ফুলতলা এম এম কলেজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ কমিটির প্রধান গাজী ইয়ামিন জানান, কলেজ ক্যাম্পাসে কতিপয় বহিরাগত যুবকদের উপস্থিতির বিষয়টি অধ্যক্ষকে অবহিত করে কমিটির সদস্যদের নিয়ে শিক্ষক মিলনায়তনে ফিরে যাই। অল্প সময়ের মধ্যে এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এমন সংবাদ জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে আসার পূর্বেই ওই ছাত্রকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কলেজ পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আহমেদ বলেন, কয়েকদিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগত আনাগোনা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে কতিপয় ছাত্রনেতাদের সহযোগিতায় বহিরাগতরা এসে নিয়মিত ছাত্রদেরকে লাঞ্চিত করে। কলেজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কমিটিসহ শিক্ষকেরা অধ্যক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছেন। এ সকল ঘটনার কোন প্রতিকার না হওয়ায় কলেজ প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পর ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রের জীবন দিতে হলো।
কলেজ অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমান বলেন, কলেজের ভেতর বিশৃঙ্খলা করার ঘটনা শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনায়তনে একত্রিত করে তাদেরকে নিয়ে সচেতনমূলক সভা করা হয়েছে। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে তার পিতা সৈয়দ আবু তাহের জানান, আমার একমাত্র পুত্র আলিফ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। লেখাপড়া শেখানোর জন্য সুস্থ সবল সন্তানকে কলেজের পাঠিয়ে এখন তার লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। যারা আমার নিরাপরাধ সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্রের খুনের খবর পেয়ে খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান, পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক ইকবাল হোসেনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং হত্যাকারীদের শনাক্ত ও আটকের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন।
ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ ইলিয়াস তালুকদার জানান, প্রেমঘটিত ঘটনায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে কলেজ ছাত্র আলিফকে খুন করা হতে পারে ধারনা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশ ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূরের খালাতো ভাই হন নিহত আলিফ।
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে চিত্রনায়িকা শাহনূর লিখেছেন, ‘সৈয়দ আলিফ রোহান, আমার খালাতো ভাই।
আজ দুপুরে কে বা কারা তাকে কলেজ থেকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা তার হত্যার সঠিক বিচার চাই।