বন্দরে না পৌঁছাতেই লোপাট হচ্ছে রপ্তানি পণ্যের এক তৃতীয়াংশ বন্দরে পৌঁছানোর আগে চলতিপথে পণ্য লোপাটে শঙ্কায় পড়ছে তৈরি পোশাকের রপ্তানি। এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তিও। গত কয়েক মাসে একের পর এক বিদেশি ক্রেতার অভিযোগ, প্রতি চালানেই মিলছে না ক্রয় করা পণ্যের এক তৃতীয়াংশ। ক্ষুব্ধ হয়ে আর পোশাক না কেনার হুমকিও দিচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক ক্রেতা।
দিশেহারা কারখানার মালিকরা মামলা করলে তদন্তে নেমে সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধানও পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। পাঁচ সদস্য ধরা পড়ার পর বেরিয়ে এসেছে পণ্য চুরির কলাকৌশল। জাতীয় রপ্তানির আশি শতাংশের বেশি আসছে কেবল তৈরি পোশাক থেকে।
করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার একশ ছেচল্লিশ কোটি ডলার। শীর্ষ এই রপ্তানি খাত এবার নতুন বিপদের মুখে। ওয়েস্ট নিট ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রত্যেক কার্টুন থেকে কিছুকিছু করে সরাতে সরাতে চারটা কন্টেইনার থেকে প্রায় ২ লাখ ডলারের মতো চুরি হয়েছে। আমার মতো আরও ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা আমার মতোই ভুগছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের সম্মান থাকবেনা।
অর্ডারের চেয়ে যদি কম এক্সপোর্ট করা হয় তাহলে তো দেশের মান ক্ষুন্ন হবেই।’ এ নিয়ে মামলা হলে দিনের পর দিন পোশাক কারখানা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য ভর্তি কাভার্ডভ্যান অনুসরণ করতে থাকেন গোয়েন্দারা। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির চালক, সহকারীসহ ধরা পড়ে পাঁচজন। তারা জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জে কারখানা থেকে পণ্য বোঝাই করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে ছোটে কাভার্ডভ্যান। কুমিল্লায় পৌঁছে ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির নিজস্ব গ্যারেজে যাত্রাবিরতির সময় কাভার্ডভ্যানের একটি অংশ খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা।
কার্টুন খুলে পণ্য সরিয়ে ফের প্যাকেট করে রাখে তারা। তারপর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে বিদেশি ক্রেতার প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয় কাভার্ডভ্যান চালক। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য রিয়াদ বলেন, ‘কার্টুন থেকে তিনভাগের এক ভাগ নামাই। বাকি দুইভাগ রেডি করে চট্টগ্রামের জন্য পাঠানো হয়। আমরা এগুলো টাকার বিনিময়ে করে থাকি।’
এভাবে কোটি কোটি টাকার পণ্য সরিয়ে বিপুল সম্পদ গড়েছে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে ৭০ বস্তা শার্ট, প্যান্ট, উলের জ্যাকেট ও সোয়েটার উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘পরিহণের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে চোর চক্রের যোগাযোগ থাকায় এই কাজগুলো তারা সহজে করতে পারে।
এটার কারণে কিন্তু বিদেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত পরিবহণে জিপিএস সিস্টেম চালু করলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে।’ সূএ,dbc.N