লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে কাজী মোহাম্মদ সোলায়মান ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এসময় উভয়পক্ষের ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন ও চন্দ্রগঞ্জ থানার কনস্টেবল মোজাম্মেল হোসেন। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খবর পেয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে দেখতে আসেন পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন।
এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী আকবর হোসেনসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। আকবর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ও অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে থানা আওয়ামী লীগ ওই কমিটি ভেঙে দেয়। পরে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ১৬ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব ওই কমিটির অনুমোদন দেন। এ কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে রাতেই আওয়ামী লীগের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করে।
এদিকে, নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের আরেক অংশ বুধবার বিকেলে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে আনন্দ মিছিলের ডাক দেয়। অন্যদিকে, একই সময় বিরোধীরা বিক্ষোভ মিছিল করবে বলে জানায়। এতে পুলিশের পরামর্শে সন্ধ্যার পর আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিকেলে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ সোলায়মানের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর আয়োজিত আনন্দ মিছিলে সোলায়মানের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এসময় ইটপাটকেল ছুঁড়লে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এতে আওয়ামী লীগের উভয়পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হন।
চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছি। আমাদের আনন্দ মিছিলে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এতে আমাদের আট নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ আমাদের তিনজনকে আটক করে নিয়ে গেছে।
বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোহাম্মদ সোলায়মান ও ছাত্রলীগ নেতা মাসুদুর রহমানের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে কী না তা আমার জানা নেই। কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাদের থামাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়। এতে আমাদের দুইজন আহত হয়েছেন। পরে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ১২ জন আটক রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কর্মসূচি ছিল। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকজন আটক আছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।