বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:১২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
লোহাগড়ায় বিএনপির উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি- স্যালাইন ও বিস্কুট বিতরণ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি শিক্ষার্থীবান্ধব হবে কবে? ঈদগাঁও উপজেলার নির্বাচনে সুবিধাজনক স্থানে আবু তালেব, লড়ে যাবেন সেলিম আকবর এবং শামশু। আমরা চাই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহন করুক, যত বেশী অংশ গ্রহন করবে ততবেশী প্রতিযোগিতা পূর্ণ হবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রথম নারী মহাপরিচালক হলেন শিরীন পারভীন সরকারি সা’দত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত মুরাদনগরে গৃহবধূকে জবাই করে হত্যার অভিযোগ লোহাগড়ায় প্রচন্ড গরমে ৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ, স্কুল ছুটি ঘোষণা  লোহাগড়ায় বাল্যবিবাহের সাথে  সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চারজনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা লোহাগড়ায় বাল্যবিবাহের সাথে  সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চারজনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা

৪২ কেজিতে এক মণ! প্রতারিত ডিমলার কৃষক

(জামান মৃধা ডিমলা প্রতিনিধি):-
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২

৪০ কেজিতে এক মণ হলেও নীলফামারী ডিমলা উপজেলার হাট -বাজার গুলোতে এক মণ কৃষিপণ্য বিক্রি করতে কৃষককে দিতে হচ্ছে ৪২ কেজি। আর পণ্যের পরিমাণ ৫০ কেজি হলে কৃষক দাম পান ৪৭ কেজির। উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে ফড়িয়া/আড়তদারের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ কৃষক। বিষয়টি অনিয়ম হলেও ডিমলা উপজেলায় এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ বছরের পর বছর প্রতারিত হলেও প্রশাসনের কোন কর্মতৎপরতা নেই এ অঞ্চলে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০/২৫ টি হাট বাজার রয়েছে। কৃষি প্রধান এ উপজেলায় ধান, পাট, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, বাদাম, সরিষা ইত্যাদি প্রধান ফসল। উপজেলার ছোট বড় সব হাট বাজারে কৃষক কোনও পণ্য বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণে তাকে দুই কেজি কোন ক্ষেত্রে তারও বেশি কৃষিপণ্য দিতে হয়। স্থানীয় ভাষায় এটিকে ধলতা বলে। আর পণ্যের পরিমাণ ৪০ কেজি হলে কৃষক দাম পান ৩৮ কেজির। কৃষকের পণ্য যদি ৫০ কেজি হয় তাহলে সেখান থেকে ধলতা ৩ কেজি বাদ দেয়া হয়। পণ্যের পরিমাণ ৬০ কেজির বেশি হলে বাদ যায় ৪ কেজি। ধলতার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিয়ম ও ব্যবসায়ী নিয়ম-নীতির লংঘন হলেও ডিমলা উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। কৃষকরা প্রতিবাদ করলে ব্যবসায়ীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার অহরহ ঘটনা ঘটেছে গদি ঘরে।হতদরিদ্র কৃষকদের

অভিযোগ প্রশাসনের তদারকির অভাবেই ব্যবসায়ীরা তাদের উপর জুলুম চালানোর সাহস পায়। এবার বোরো মৌসুমে কয়েক দফা ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবাদি ফসলের ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফসলি রবিশস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষক ঘরে তুলতে পারিনি। ধানের দামও কম, তারপর আড়তদার/ব্যবসায়ীরা জুলুম করলে আমরা বাঁচবো কি করে?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট, টুনির হাট, খগারহাট, কালীগঞ্জের হাট, একতা বাজার, শুটিবাড়ী হাট, নাউতাড়া বাজার, ডালিয়া বাজার, ডালিয়া নতুন বাজার, ছাতনাই কলোনি বাজার, পাগল পাড়া বাজার, চাপানিরহাটসহ সব হাট-বাজারে একই অবস্থা।

রবিবার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চাপানির হাটে গিয়ে দেখা যায়, ৯৮০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতিমণে দুই কেজি করে ধলতা দিতে হচ্ছে কৃষককে। এই দুই কেজি ধলতায় কৃষক প্রতারিত হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে ভুট্টা বিক্রি করতে আসা কৃষক। ৪৩ কেজিতে ভুট্টার মণ ধরে ১০০ টাকার ঊর্ধ্বে প্রতারিত হচ্ছে ভুট্টা চাষি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আড়ত গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বস্তায় ৪২ কেজি ৭০০ গ্রাম হলেও কৃষককে মূল্য দিচ্ছে ৪০ কেজির। এসব নিয়ে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে তর্ক-বিতর্কে জড়ালেও কৃষককে ৪০ কেজির দাম নিতে বাধ্য করছে তারা।

গয়াবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক ভূট্টু মিয়া বলেন, ভূট্টা, পেঁয়াজ, পাট, ধান যা কিছু বিক্রি করবো ৪২ কেজিতে মণ। কথা বললে আমাদের সঙ্গে খারাপ, কর্কশ আচরণ করে আড়তদার/ব্যবসায়ীরা আবার মণ প্রতি ১০ টাকা করে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হয় আমাদের।

চর খড়িবাড়ি অঞ্চলের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, যে হাটেই যাবো সেখানেই ৪২ কেজিতে মণ। আসলে আমরা আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছি। আর প্রশাসন এসব দেখে না ! দেখলে তো তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করতো।

ধান ও ভূট্টা ব্যবসায়ী জিয়াউল হক (জিয়া) বলেন, শুধু আমাদের হাটে নয়, প্রতিটি হাটে দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ম চলে আসছে তাই আমরাও নিচ্ছি। আর শুধু এ হাট নয় জেলার সব হাটেই একই নিয়ম।

গয়াবাড়ি ইউনিয়নে শুটিবাড়ী হাট/বাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি আবু তাহের মিয়া বলেন, আমরা কৃষকের নিকট ৪২ কেজি নয়, ৪১ কেজিতে মণ নেই। কারণ আমাদের ধান বিক্রির সময় ঘাটতি আছে এছাড়া বিক্রির সময় মহাজনকে ১/২ কেজি ধলতা দিতে হয়। সে কারণেই কৃষকের নিকট থেকে ৪১ কেজিতে মণ

নিতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) সেকেন্দার আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেন, বলে এড়িয়ে যান।

নীলফামারী জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা ও জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী এটিএম এরশাদ আলম বলেন, ৪০ কেজির জায়গায় ৪২ কেজিতে মণ এটি কৃষকের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা। আমরা অবশ্যই অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নীলফামারী জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ও কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নীলফামারীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি সত্যি হলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয় সম্পর্কে আমরা তদন্ত করে দেখবো। সত্যতা পেলে যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

দয়া করে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..