কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর থেকে জড়ো হতো থাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সর্বাত্মক প্রতিহত করতে শাহবাগে মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে শাহবাগ অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য দেওয়া হয়েছিল লোহার তারকাটা ব্যারিকেড।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিনভর এমন আয়োজনের পর বিকাল ৫ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ মিছিল সেই ব্যারিকেড অতিক্রম করতে লেগেছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এসময় স্পষ্টতই পুলিশকে পিছু হটতে দেখা গেছে। তবে এটাও স্পষ্ট ছিল- সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে ডিএমপির পুলিশ। কোনো ধরণের সংঘাতে না গিয়ে পিছু হটে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকুলে রেখেছিল।
তবে কুমিল্লাতে ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ। সেখানে বিকাল তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আনসার ক্যাম্প অতিক্রম করার সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল ছুঁড়েছে পুলিশ। এতে অন্তত ৩ জন সংবাদকর্মীসহ আহত হয়েছেন ২০ শিক্ষার্থী।
এদিকে সকালেই আন্দোলনকারীদেরকে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, লিমিট ক্রস করলে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা যদি জানমালের ক্ষতি করে, অগ্নিসংযোগ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তাহলে তো পুলিশ বসে থাকবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন- আদালতের দেওয়া ৪ সপ্তাহের মধ্যে কেউ যদি আন্দোলন করে তবে জনদুর্ভোগ বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতোসব হুঁশিয়ারি, সতর্ক বার্তাও যেন আন্দোলনকারীদের এতটুকু টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে তারা।
অন্যদিকে, একই দিনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তবে অনতিবিলম্বে ব্লকেড থেকে সরে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, কোটা নিয়ে আদালতের রায়ের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। তবে এখনও যারা আন্দোলনে আছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে মনে করেন তিনি।
মূলত বুধবার (১০ জুলাই) শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধে সারাদেশে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্লকেড চলে। এ সময় সারাদেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব কোটা বাতিল করে সরকার। কিন্তু সেটি হাইকোর্টে পুর্নবহালের আদেশের পর আন্দোলন শুর করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন। তবে এবার সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবি করছেন আন্দোলনকারীরা।